লিচুর বাম্পার ফলন হলেও দাম পাচ্ছে না বাগান মালিকরা

136

লিচু বিক্রির সময় শুরু হলেই প্রতিদিন বাগানেই লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি করতাম। কিন্তু এ বছর সেই সুযোগ হয়নি। কোন ক্রেতাই বাগান থেকে লিচু কিনে নিতে আগ্রহী নয়। ফলে অনেকটা কমমূল্যে এবারে লিচু বিক্রি করতে হয়েছে। যার ফলে দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমি। কভিট-১৯ করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউন না থাকলে বাজারে আগের মত লিচুর চাহিদা থাকত তাহলে আগেকার মত লাভবান হতে পারতাম। লিচু চাষ করে চলতি বছর সফলতা কেমন পেয়েছেন জানতে চাইলে সাতকানিয়ার অন্যতম লিচু চাষী পুরানগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাশেদ হোসেন সিকদার দুলু উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন। জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল পুরানগড়, সোনাকানিয়া, মার্দাসা ও ইউচিয়া ইউনিয়নে বানিজ্যিক ভাবে মধুমাসের রসালু ফল লিচুর চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় লিচু বাগানটিই পুররানগড়ে অবস্থিত। আর এটির মালিক হচ্ছে দুলু সিকদার। সম্প্রতি সরেজমিন এ বাগান পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত পক্ষে ৫০ জন শ্রমিক লিচু গাছ থেকে নামানো ও বাজারজাত করণের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্থ সময় কাটাচ্ছেন। আর তাদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন বাগান মালিক দুলু সিকদার। জানা যায়, ২০০০ সালের আগেই থেকেই তিনি প্রৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত পাহাড়ি ঠিলা প্রকৃতির জমিতে লিচু চাষ শুরু করেন। গত ৫ বছর আগেই এ বাগানে অন্তত ৭ শতাধিক লিচু গাছ থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় লিচু গাছের সংখ্যা কমেছে। এখন রয়েছে মাত্র ৪ শতাধিক লিচু গাছ। এ চার শতাধিক লিচু গাছের সঠিক ভাবে পরিচর্যার পর ফলণ ভাল হলে অন্তত ১২-১৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রয়করা যায়। কিন্তু এবারের সঠিক পরিচর্যার পর ফলন ভাল হলেও হাট-বাজার বন্ধ থাকার কারনে কমে গেছে লিচুর চাহিদা। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকার লিচু ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে লিচু নিয়ে গেলেও এবছর উল্টো তাদের ডেকে ডেকে কম দামে লিচু বিক্রয় করতে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ক্ষতির পরিমাণ কমেন হবে জানতে চাইলে দুলু সিকদার বলেন, গত বছরের অর্ধেক কোন রকমে টাকা উঠাতে পারব। এর বেশি হবে বলে মনে হয়না। কারন বাজারে লিচুর চাহিদা অনেক কম। জানা যায়, সাতকানিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা হচ্ছে বাঁশখালী। বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের লিচু হচ্ছে অনেকটা দেশ সেরা। প্রতি বছর লিচুর মৌসুমে কালিপুরের লিচুর বেশ চাহিদা। এরিমধ্যে রস আর স্বাদে অন্যন্য হওয়ার কারনে সাতকানিয়ার দুলু সিকদারের লিচু বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। দুলু সিকদারের লিচু বাগানে কাজ করা বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের শ্রমিক মনছুর জানান, আমিসহ অন্তত ৪৫ জন শ্রমিক ১৫ দিন থেকে এ বাগানে কাজ করছি। প্রতি বছর এ বাগারে লিচু কাজ করার জন্য এখানে চলে আসি। অন্য বছর এখানে অনেক পাইকাররা এসে লিচু ক্রয় করলেও এবার ব্যাতিক্রম।
এবারে ক্রেতাই নেই। লিচু চাষে লাভ ক্ষতির বিষয়ে বাগান মালিক রাশেদ হোসেন সিকদার দুলু বলেন, আমি দীর্ঘ দিন থেকে লিচু চাষ করি। সেই হিসেবে চলতি বছরও করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে দেশ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় বাজারজাত করতে পারিনি। বাজারে চাহিদা কম হওয়ায় লাভবান হতে পারিনি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক হলে আর ভাল ফলন হলে লাভবান হতে পারব ইনশাআল্লাহ। এ বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, সাতকানিয়ার মধ্যে সোনাকানিয়া, মাদ্রাসা, এওচিয়া ও পুরানগড় ইউনিয়নের পাহাড়ি ঠিলা জমিতে লিচু চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে পুরানগড়ের দুলু সিকদারের বাগানটি বড়। আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত খবরাখবর রাখি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলে চাষীরা লাভবান হতে পারবে।