লামা-আলীকদম ইটেরভাটায় পুড়ছে অবৈধ বনের কাঠ

96

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রায় ৩০টি অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটেরভাটা। আর ভাটা তৈরীর জন্য চলছে পাহাড় কাটা, উজাড় করা হচ্ছে বনের গাছ।এসব ইটভাটায় বুলডোজার দিয়ে রাতদিন পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে পরিবেশ বিপন্নকারীরা। ইট ভাটা গুলো কোন ধরণের বৈধতা না নিয়ে একটি মহলকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর পাহাড় কেটে, কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে। আলীকদম উপজেলায় ইটভাটাগুলোতে নির্বিচারে পাহাড় কেটে ও পুড়ছে বনের কাঠ।ভাটাগুলোর কোনটারই বৈধতা নেই। তারপরও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে চলছে প্রতিবছর অবৈধ ইটের ভাটায় লাকড়ি পোড়ানো ও পাহাড় কেটে ইট তৈরী। এসব ইটের ভাটায় লাকড়ি পরিবহনের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো সারা বছরই ক্ষতবিক্ষত থাকে। ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠে। রাস্তাঘাট ধূলায় একাকার হয়ে সর্বসাধারণের চলাচলে বিঘন্ন সৃষ্টি হয়। অবৈধ এসব ইট ভাটা প্রশাসন ও বন বিভাগ এবং পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে দিনে রাতে কাঠপুড়ে ও পাহাড় কেটে ইট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে একটি ওয়ার্ডের মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধভাবে প্রায় ২৬টি ইটভাটা গড়ে তোলেছে প্রভাবশালী একটি মহল। জন বসতি পুর্ন এই ফাইতং এলাকায় গড়ে তোলা ইটভাটা গুলো প্রতি বছর গিলে খাচ্ছে কয়েক কোটি টন জ্বালানী কাঠ। ইট তেরী করার জন্য এসকেবেটর ও ড্রোজার সহ ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে কাটা হচ্ছে বিশাল বিশাল পাহাড়। স্থানীয়রা জানান, ফাইতং ইউনিয়নে গত ৯-১০ বছর ধরে একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ ভাবে গড়ে তোলে ইটভাটা। এসব ইটভাটার নেই কোন জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র। ইটভাটা গুলোতে মাটি যোগান দিতে এসকেবেটর ও ড্রোজার সহ ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে অবৈধভাবে বিশাল বিশাল পাহাড় কাটা হচ্ছে। ইট পুড়ানোর জন্য কোটি টন জ্বালানী যোগান দিতে উজাড় করা হচ্ছে বনজ্র সম্পদ। যার ফলে সম্পূর্ণ হুমকির মুখে পড়েছে এ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে বিগত কয়েক বছর আগে ফাইতং এলাকায় পাহাড়ধসে একই পরিবারের ১১ জন, শিশু ও নারীসহ ১৩ জনের মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি কারো। অপরদিকে ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, ফাইতং ইউনিয়নে যেই সব ইটভাটা রয়েছে একটার কোনো প্রশাসনিক ভাবে অনুমোদন নেই। এ এলাকয় ইট পরিবহনের ফলে সরকারি অর্থে নির্মিত রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে যাতায়তে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা ও মাসিক সমন্বয় সভায় বার বার অভিযোগ করেও স্থানীয় প্রশাসন আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। এভাবে যদি চলতে থাকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই এলাকা পুরোপুরি মরুভূমিতে পরিনত হবে।স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধির মতে,ইট ভাটার কারণে পাহাড়ে কোন গাছ পালা নেই এবং কৃষি জমি নেই বললে চলে। ইট ভাটার দুষিত কালো ধোঁয়ার কারনে নানা ধরনের রোগে ভুগছে এলাকার শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সের অসংখ্য নারী পুরুষ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে বড় ধরনে বিপয়য়ের আশংকা করে এ জনপ্রতিনিধি। লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, লামার ফাইতং এলাকায় ইটভাটা গুলোতে জ্বালানী পুড়ানো বিষয়টি নিয়ে বনবিভাগ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার গন ফুট জ্বালানী কাঠ জব্দকরা হয়েছে। বন আইনে বিভিন্ন লোকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং ৭ থেকে ৮টা যানবাহন আটক করা হয়েছে।এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের সাথে যৌথ অভিযানে চালিয়ে ৬ থেকে ৭টি ইট ভাটা মালিকের জরিমানা করা হয়েছে। লামা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ-জান্নাত রুমি জানান, লামায় কোনো বৈধ ইটভাটা নেই। যারা ইটভাটায় ইট তৈরির কার্যক্রম চালু রেখেছেন, সবই অবৈধ। ইতোমধ্যে ফাইতং এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা গুলো বেঙ্গে দেওয়া হয়েছে এবং পাহাড় কাটার অপরাদে অনেক ইটভাটার মালিকে জরিমান করা হয়েছে এবং ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার জানান, আলীকদমে কোন ইট ভাটার লাইসেন্স নেই। অবৈধ ইট ভাটা গুলোতে পাহাড় কাটার এবং কাঠ পুড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।