লামায় পানিবন্দী ১৫ হাজার মানুষ, পাহাড়ধসে নিহত ১

43

ফের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে একটানা রবিবার সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদী, ঝিরি ও খালগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌর এলাকার ৫ শতাধিক বাড়িঘরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে পাহাড়ি এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়ে ওইসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষগুলো। এদিকে রবিবার ভোর রাতে ভারী বর্ষণের সময় লামা সদর ইউনিয়নের মধুঝিরির আগায় পাহাড়ধসের মাটি চাপা পড়ে নুর জাহান (৬৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এসময় নুর জাহানের ছেলে মোহাম্মদ ইরান ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ধসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বসতবাড়ি, ফসরি ফসল, জমি ও রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দুর্যোগ কবলিতদেরকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আগে থেকেই ৫৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্র খোলা ছিল। এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেড় শতাধিক বন্যাকবলিত ও পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড়ধসে আরো মানবিক বিপর্র্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৫ জুলাই দিবাগত রাত থেকে একটানা ভারী বর্ষণ শুরু হলে লামা পৌরসভা ও উপজেলার লামা সদর, রুপসীপাড়া, গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকালে এ বর্ষণ কমে গেলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে আবারো ভারী বর্ষণ শুরু হলে রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসসষ্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজার, কলিঙ্গাবিল পাড়া, ছাগল খাইয়া, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকাসহ ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, ছোটবমু, বড় বমু, গজালিয়া ইউনিয়নের গাইন্দাপাড়া, হেডম্যান পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের শিবাতলী পাড়ার একাংশসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়সহ ঘরবাড়ি ও দোকান পাঠ রয়েছে। আবার ভারী বর্ষণের সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসও দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সদর ইউনিয়নের মধুঝিরি এলাকায় এক বৃদ্ধ নারী নিহত ও ২জন আহত হন। এর আগের দফার বর্ষণে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের লাইনঝিরি ও মিরিঞ্জা এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বড়ছন খোলা এলাকার ব্রিজ, পৌরসভা এলাকার মাস্টার পাড়া ও মধুঝিরি আনসার ভিডিপি কার্যালয় সংলগ্ন পূর্বপাড়া শাহাদাতের বাড়ির পাশের ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানের ব্রিজ কালভাটগুলো পানির স্রোতের টানে দেবে যায়। নদী খাল ও ঝিরি গুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া লামা আলীকদম, লামা ফাঁসিয়াখালী, লামা রুপসীপাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে ও পাহাড় ধসে পড়ে উপজেলা সদরের সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, আবারও ভারী বর্ষণের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমুহ প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে বার বার পৌর শহর প্লাবিত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। লামাকে বন্যামুক্ত করতে নদীর গতি পরিবর্তনের জোর দাবী জানান জাপান বড়ুয়া।
ফের পাহাড়ি ঢলে লামা পৌরসভার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ভোরে বন্যার সামগ্রিক উন্নতি হলেও রবিবার সকাল থেকে ঢলের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পৌর এলাকার ৫’শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে অন্তত ২’শ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। পৌর মেয়র আর ও বলেন, পানিবন্দি ও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য নৌকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়া ও পানিবন্দি লোকজনকে শুকনো খাবার, খিচুড়ী ও জরুরী ত্রান হিসেবে চাল দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, বন্যায় ও পাহাড় ধসে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রিত লোকজনের মাঝে শুকনো খাবারসহ জরুরী ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত লোকজনকে শুকনো খাবার বিতরণের পাশাপাশি এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত ১৫০ পরিবারের মাঝে ত্রান সহায়তা হিসেবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুমও খোলা রয়েছে বলে জানান তিনি।