লামায় পরীক্ষামূলক গম চাষে আশাতীত ফলন

35

দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষতিকারক তামাকের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে পার্বত্য বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলা। এক সময় যেসব জমিতে সবজি উৎপাদন করে কৃষকের সংসার চলতো; এখন বেশি লাভের আশায় সে জমিতেই তামাক চাষ করছে কৃষকরা। আর এ তামাক চাষ থেকে কৃষকদের ফিরিয়ে রবি শস্য উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা দু’টিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক গম চাষের উদ্যোগ নেয় বেসরকারি সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের এগ্রো ইকোলজি প্রকল্প। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া দ্বিতীয় খাদ্যশস্য গম চাষের জন্য উপযোগী। পরীক্ষামূলক এ চাষে আশাতীত ফলন হওয়ায় এতদ্বাঞ্চলে গম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, গম চাষ সম্প্রসারণ হলে এলাকায় ক্ষতিকর তামাক ছেড়ে গম আবাদে আরো বেশি ঝুঁকবেন কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লামা ও আলীকদম উপজেলায় একসময় উৎপাদিত হতো বিভিন্ন কৃষি পণ্য। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো উৎপাদিত ফসল। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে এসব উপজেলার জমিগুলোতে এখন আর সবজি চাষ হয় না। টোব্যাকো কোম্পানীগুলোর লোভনীয় প্রণোদনায় ক্ষতিকর তামাক চাষ করা হচ্ছে। তামাক কোম্পানির এসব প্যাকেজে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ কৃষক, আর ফসলি জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা। তাই ক্ষতিকর তামাক উৎপাদন বন্ধ করে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে গম উৎপাদনের উদ্যোগ নেয় বেসরকারি সংস্থা কারিতাস এগ্রো ইকোলজি প্রকল্প। চলতি মৌসুমে লামা ও আলীকদম উপজেলায় ১৫০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে গম চাষ করা হয়। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো সার-বীজ পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে এই গম চাষে আশাতীত ফলনও হয়েছে। কার্তিকের শেষ সপ্তাহ হতে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত গম বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। পরীক্ষামূলক চাষের মধ্যে রয়েছে বারি ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ জাতের গম।
লামা উপজেলার গম চাষী গম চাষী ক্য সাইন শৈ বলেন, আমরা আগে তামাক চাষ করতাম, দিনরাত প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। তার তুলনায় তেমন লাভের মুখ দেখতাম না। এখন কারিতাসের সহযোগিতায় আমরা তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে গম চাষ করেছি। এবার ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি অনেক লাভবান হবো।
তামাক ছেড়ে গম চাষী জবুরং ম্রোরা বলেন, আমি তামাক চাষ আগে করতাম এখন তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে ২০ শতক জমিতে গম চাষ করেছি। গম চাষে তেমন কোনো কষ্ট নেই; অতি সহজে চাষ করা যায়। গম চাষ করে আমার ভালো লেগেছে।
কৃষকেরা জানান, প্রথমবার কারিতাসের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে পর্যাপ্ত গমের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরী, ঔষধ ও কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহের কারণে গম চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন তারা। আর গম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম এবং তুলনামূলকভাবে বাজারমূল্যও বেশি। তাই এ ফসল চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
আলীকদমের গম চাষী নাইতিং প্রু বলেন, গমের তেমন কোনো রোগ-বালাই না থাকার কারণে গম চাষ সহজ হয়েছে। যদিও এটি আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। কিন্তু কারিতাস বাংলাদেশের সহযোগিতায় আমরা এবার সফল হয়েছি। আশা রাখছি আগামি বছর ৫০ শতক জমিতে গম চাষ করবো।
কারিতাস এগ্রো ইকোলজি প্রকল্পের লামা উপজেলা মাঠ কর্মকর্তা মো. মামুন সিকদার জানান, গম রুটি ভাতের চেয়ে পুষ্টিকর। এখানের আবহাওয়া ও মাটি গম চাষের উপযোগী। তাই লামা ও আলীকদম উপজেলার ১৫০ শতক জমিতে ২০ জন চাষীকে প্রণোদনার মাধ্যমে গম চাষে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরীক্ষামূলক এ গম চাষে কৃষকেরা লাভবানও হয়েছেন। বারি ২৪ ও ২৫ এবং ৩০ ও ৩১ জাতের ফলন ভালো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
লামা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালাম বলেন, গম চাষ একটি ভালো কাজ, যে চাষে কৃষকদের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এবার যদি চাষ ভালো হয় তাহলে আগামিতে আমরা তাদের প্রণোদনার মাধ্যমে গম চাষ বৃদ্ধিতে কাজ করবো।
আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম ফারুক বলেন, প্রথমবারের মতো কৃষকদেরকে তামাক চাষ থেকে ফেরাতে গম চাষ শুরু করেছে কারিতাস। আশা রাখি আগামিতে লামা-আলীকদমের কৃষকরা তামাকের পরিবর্তে এ গম চাষ করবে এবং ভালো ফলনও পাবেন তারা। কৃষকদের বীজ, সার, প্রশিক্ষণ, মজুরী প্রদান করা হয়েছে, তাই তারা উৎসাহের সাথে গম চাষ করেছেন। শুধু তাই নয়, কৃষকরা গমের পাশাপাশি এক জমিতে ৩টি ফসল চাষ করতে পারবে। গম চাষের কষ্ট যেমন কম, লাভও বেশি।