লামার ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়কের বেহাল দশা

59

কার্পেটিং, ইট, খোয়া উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়ক। কোথাও বড় গর্ত হয়ে মিনি পুকুর ও খালে পরিণত হয়েছে। তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই এ সড়কে। হঠাৎ করে বোঝার উপায় নেই সড়কটি পাকা না কাঁচা। একদিন বৃষ্টি হলেই সপ্তাহের বেশি সময় পানি জমে থাকে সৃষ্ট গর্তগুলোতে। বেহাল এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল দূরের কথা, বর্তমানে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া সড়কের বেশির ভাগ স্থানে প্রয়োজনীয় জায়গা এবং মাটি না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি থোয়াইন সানুর নিজ উদ্যোগে সড়কটি সংস্কার করে দিলেও চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সড়কটির বিভিন্ন অংশে পূণরায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবুও নিরুপায় হয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে ফাইতং ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষকে। স্থানীয়রা জানান, প্রথমত ব্যাপক যানবাহন চলাচল, আবার ফাইতং ইউনিয়নে স্থাপিত ইট ভাটাগুলো থেকে বড় বড় ট্রাক যোগে ধারণ ক্ষমতার বেশি ইট, পাথর, বালু ও গাছ পরিবহনের কারণেই খোয়া ও বিটুমিন উঠে পুরো সড়ক জুড়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। দ্রæত সড়কটি সংস্কার করা না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তারা। অভিজ্ঞমহল মন্তব্য করে বলেন, প্রতিবছর সংস্কার কাজ করে কোনো লাভ নেই। সড়কটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজন নকশার পরিবর্তনণ ও ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা না হলে একদিকে কাজ হবে, অন্যদিকে বৃষ্টিতে ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ভেঙে চুরে তছনছ হয়ে যাবে। এতে কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে দুর্ভোগ। কাজের কাজ কিছুই হবে না। এলাকাবাসী জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বানিয়ারছড়া থেকে উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কটি প্রায় ২০ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মাণ করে। এটি দুর্গম পাহাড়ি বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র ও অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ণ। ফাইতং ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের আজিজনগর ও গজালিয়া ইউনিয়নের জনগণ এবং মালামাল পরিবহনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। এ আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় হাজারো ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। বছর জুড়ে এসব যানবাহনে ধারণ ক্ষমতার বেশি ইট, পাথর, বালু ও গাাছ পরিবহনের কারণে সড়ক ভেঙ্গে চুরে তছনছ হয়ে যায়। আবার কখনো অতিবৃষ্টির ফলে পানি গড়িয়ে সড়কের ওপর পাড়ার কারণে বালু, খোয়া ও বিটুমিন উঠে পুরো সড়ক জুড়ে খানাখন্দে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের কারণে পাহাড়ের পানি গড়িয়ে পড়ে ধসে পড়ছে সড়কটির দু’পাশ। এতে করে দিন দিন সরু হয়ে যাচ্ছে সড়কটি। সরেজমিনে সড়কের চার কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। পুরো সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়ে মিনি পুকুরে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের কিছু অংশ ধসে পাশের নিচে পড়ে গেছে। বিশেষ করে সড়কের ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়, ফাইতং বাজার, আবদুল খালেকের মাছের প্রজেক্ট সংলগ্ন, নয়াপাড়া কবরস্থানের পাশের অবস্থা খুবই খারাপ। এতে এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যানবাহন খানাখন্দে আটকে পড়ে। এ অবস্থায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রাক, জীপ, সিএনজি, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। সড়কের চলাচলকারী সিএনজি চালক মো. বাবুল, আনোয়ার হোসেন, মহি উদ্দিন, মো. ইয়াছিন ও ট্রাক চালক জমির হোসেন বলেন, আরকান সড়ক থেকে ফাইতং বাজার যেতে যেখানে বড়জোর ১০-১৫ মিনিট সময় লাগার কথা, সেখানে সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে সময় লাগছে প্রায় এক ঘন্টা। রাস্তার এ বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহনের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে। প্রতিদিন এ সড়কে ছোট খাট দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। সড়কটি দ্রæত সংস্কার করা না হলে, যে কোন সময় এ সড়কে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেযারম্যান মো. জালাল উদ্দিন জানান, সড়কটির এমন করুণ অবস্থা বিরাজ করছে যে, একদিন বৃষ্টি হলে এই সড়কের ভাঙাচেরা অংশে সপ্তাহ খানেক পানি জমে থাকে। এতে যান বাহন চলাচল দুরের কথা, পায়ে হাঁটাও কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। এদিকে স্থানীয়দের কথা ভেবে গত বছর সড়কটি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে সংস্কার করে দিলেও চলতি বর্ষার শুরুতে পূণরায় বড় বড় গর্তের হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে জানান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি থোয়াইন সানু মার্মা। ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়কের বেহলা অবস্থার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লামা উপজেলার সার্ভেয়ার মো. জাকির হোসেন মোল্লা জানান, ভারি যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সড়কটির এ করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া ফাইতং এলাকায় স্থাপিত ইটভাটাগুলো থেকে মাত্রাতিরিক্ত ইটসহ বালু, পাথর ও গাছ পরিবহনের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, গত বছর সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে বরাদ্দের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন না হওয়ায় কাজ করা যায়নি। চলতি বছর পুণরায় প্রাক্কলন তৈরি করে অনুমোদনের পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সড়কটি দ্রæত সংস্কার করা হবে।