লকডাউন জবরদস্তিমূলক নয়, সেবামূলক দায়বদ্ধতা

25

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, করোনাকালে অবনতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকর করা একটি কঠিন কাজ। জনস্বার্থ বিবেচনায় লকডাউন জবরদস্তি ও দমনমূলক নয়, এটি সেবামূলক দায়বদ্ধতা। এই বোধ জাগ্রত করে চট্টগ্রাম মহানগরের উত্তর কাট্টলীতে প্রথমবারের মত এলাকাভিত্তিক লকডাউনের অর্জিত সফল অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে অন্যান্য এলাকায় প্রয়োগ করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই ইতিবাচক সুফল বয়ে আনবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী, স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে লকডাউন চলাকালে সংশ্লিষ্টরা সকলেই সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেজন্য সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
গত ১৬ জুন থেকে নগরীর ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে টানা ২১দিনব্যাপী লকডাউনের সমাপনী দিনে গতকাল সকালে সিটি গেইট সংলগ্ন সুজানা স্কয়ারে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল শেষে সংশ্লিষ্টদের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
পরবর্তীতে যেসব এলাকায় লকডাউন হবে সেগুলোর সম্ভাব্য আওতা ও পরিধি বিন্যাস করে সিটি মেয়র বলেন, পুরো এলাকাকে স্থবির না করে শুধুমাত্র ব্যাপকভাবে সংক্রমিত স্থানটি বেছে নিয়ে লকডাউনের আওতায় আনা হলে জীবন রক্ষার পাশাপশি জীবিকা ও অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। এতে লকডাউন নিয়ে সাধারণ মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার ভীতি ও আশংকা দূর হবে এবং লকডাউন চলাকালীন নির্ধারিত স্থানটির অধিবাসীরাও স্বস্তি অনুভব করবেন।
তিনি ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন চলাকালীন অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, এলাকাটি আবাসিক এবং এখানে গার্মেন্টসসহ ছোট-বড় শিল্প ও কলকারখানা রয়েছে। তাই প্রথমদিকে লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে দুই-একদিন পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা এলাকাবাসীর চাহিদা এবং দৈনন্দিন চাওয়া পাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সেবা দিতে সচেষ্ট হওয়ার পর একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। লকডাউন চলাকালীন সময়ে এখানে কোন হতদরিদ্র অভুক্ত ছিলেন না। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মানুষকে খাবার তুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী এলাকাবাসীকে চিকিৎসাসেবাও দেয়া হয়েছে। রোগের নমুনা পরীক্ষার জন্য বুথ ও রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাও চালু রাখা হয়েছিল। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে এই এলাকায় করোনা সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৪ জন। আজ পর্যন্ত এখানে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১১ জন। ইতোমধ্যে ৫৮ করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন। এতে বোঝা যায়, পরিকল্পিত এলাকাভিত্তিক লকডাউন চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে আরোপিত হলে পরিস্থিতি যাই হোক কেন-ভয়, উদ্বেগ, উৎকন্ঠার অবসান হবে।
সিটি মেয়র উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক লকডাউন সফলভাবে কার্যকরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী, চসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক, গণমাধ্যমকর্মী, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মহিলা কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, জেলা প্রশাসকের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হাসান, সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আরিফ, পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রাশেদুল হক, আকবরশাহ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোলতান আহমদ চৌধুরী, আবু সুফিয়ান, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহব্বায়ক মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী, সহ সভাপতি লোকমান আলী, সহ সম্পাদক রোকন উদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগের আবুল কালাম আবু, মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ ও ১০নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন মসজিদের ঈমাম ও খতিবরা উপস্থিত ছিলেন।