রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে আজ

38

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেছেন, ‘আগামীকাল (আজ) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।’
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজারে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা গত দুই দিনে মোট ২৩৫টি পরিবারের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা অনেকেই আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাই আমরা সকালে পাঁচটি বাস, তিনটি ট্রাক প্রস্তুত রেখেছি। এ পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যোগে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছে। এতে কাউকে জোর করে আনা হয়নি। এসব পরিবারের সংখ্যা, তাদের শর্তসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং রাতের মধ্যেই তালিকাটি প্রস্তুত করা হবে। এসব তালিকা থেকে সকালে যারা স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠবে মূলত তাদেরকেই প্রত্যাবাসন করা হবে।’
প্রত্যাবাসনের সময় মিয়ানমারের পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে মিয়ানমারের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ও চীনা দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তা বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। তারা পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করবেন। সারাদিন তারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের অধিবাসী হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। আমরা মূলত এই তথ্যটি রোহিঙ্গাদের জানিয়েছি। এছাড়াও মিয়ানমার সরকারের দেওয়া ছাড়পত্র অনুযায়ী এক হাজার ৩৭টি পরিবারের মোট তিন হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রথম তালিকাটি দেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে অন্যদের এই প্রক্রিয়ায় আনা হবে। কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
আবুল কালাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি হিসেবে টেকনাফের কেরুনতলী থেকে উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম এলাকা পর্যন্ত নিশ্চিদ্দ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
প্রথম দিন কতজন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেসব রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন করা হবে, তাদের পুরো ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। রাতে এটি সম্পন্ন হবে। এটি সম্পন্ন হলে সকালে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানা যাবে।’
এদিকে এর আগে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার মধ্যে দু’শতাধিক পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) ও ইউএনএইচসিআর গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করেন। তালিকায় থাকা ৯৫ ভাগ রোহিঙ্গার মাঝে প্রত্যাবাসনের বার্তা পৌঁছানো হয়েছে বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন হবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত। তবে প্রত্যাবাসনের জন্য কেরুনতলী ও ঘুমধুম ঘাট প্রস্তুত রয়েছে। প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে সেনা, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের টহল জোরদার রয়েছে। গতকাল ২১ আগস্ট বুধবার টেকনাফে শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
শালবাগান সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) অফিসে সাক্ষাৎকার প্রদান শেষে ফেরার পথে রোহিঙ্গা মো. আলম, ইসমাইল, নুর বাহার, নুরুল ইসলাম, নুর হাসান, শব্বির আহমদের সাথে কথা হলে তারা দাবি দাওয়া পূরণ হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন বলে জানান। অন্যথায় তারা স্বদেশ ফিরতে রাজি নয়। এক কথায় তারা ফিরতে রাজি নয়। তাদের এ দাবি দাওয়া গুলোর মধ্যে সরাসরি নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িতে ফেরত, কারাগারে বন্দি রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা, ধর্ষণের বিচার, অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা প্রদানসহ একাধিক শর্ত। তবে এসব রোহিঙ্গাদের সবাইকে একই সুরে কথা বলতে দেখা গেছে। অনেকটা শেখানো বুলি’র মত।
এদিকে প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি চক্র ক্যাম্পাগুলোতে সক্রিয় রয়েছে। তাদের চোখ রাঙানিতে তটস্থ সাধারণ রোহিঙ্গারা। এমনকি তারা উচ্চ স্বরে কথা বলতেও শঙ্কিত। অদৃশ্য এ চক্রের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়। প্রত্যাবাসনে রাজি ১০-১৫টি পরিবারের খবর জানা গেলেও স্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ নয়াপাড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (নং-২৬) ইনচার্জ মো. খালিদ হোসেন জানান, দুই দিনে ২৩৫ পরিবার প্রধানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ২১ পরিবারের সাক্ষাৎ নেওয়া হয়েছিল। তবে এদের মধ্যে কত পরিবার প্রত্যাবাসনের জন্য রাজি হয়েছে তা সাক্ষাৎ প্রক্রিয়া শেষে জানা যাবে বলে জানান তিনি। আবার আগের দিনের চেয়ে সাক্ষাৎকার প্রদানে রোহিঙ্গাদের আগ্রহ বেড়েছে।
প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি চক্র সক্রিয় থাকার ব্যাপারে তিনি জানান, কোন রোহিঙ্গাকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে এরকম কোন অভিযোগ তিনি পাননি।
টেকনাফ র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব জানান, র‌্যাবের তিনটি টহল দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী উস্কানিমূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে কাজ করছে তারা। প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত টেকনাফের কেরুনতলী ও ঘুমধুম ঘাট : প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমঘুম ঘাট প্রস্তুত রয়েছে। নাফ নদীর কিনারে কেরুনতলী প্রত্যাবাসন ঘাটে রোহিঙ্গাদের সাময়িক অবস্থানের জন্য ৩৩টি ঘর ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জলপথে প্রত্যাবাসন হলে এ ঘাট দিয়েই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে। অপরদিকে স্থলপথে প্রত্যাবাসন হলে বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ঘাট দিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ ফেরত পাঠানো হবে।