রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এই জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়াসহ পাঁচটি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার লোটে প্যালেস হোটেলে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের
প্রস্তাবগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান। আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়াকে সমর্থন করাসহ আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতীয় আদালতের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমত মেনে চলার অঙ্গীকার পূরণে মিয়ানমারকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানানো। মিয়ানমার যাতে বাধাহীন মানবিক প্রবেশাধিকারে রাজি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “গত মাসে আমরা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছি, তাদের একজনকেও তাদের ঘরে ফিরে যেতে দেখিনি।”
মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরাকানে, বর্তমানে যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হিসেবে পরিচিত, অষ্টম শতক থেকেই রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জনের পর সেখানে নতুন সরকার রোহিঙ্গাদের ‘টার্গেট’ করে এবং তাদের ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর ১৯৮২ সালে সেখানে নতুন নাগরিকত্ব আইন পাস হয় এবং জাতিগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদেরকে তাতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ ১৯৫২ সালে যখন ইউ নু প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখনও তার মন্ত্রিসভায় দুইজন রোহিঙ্গা মন্ত্রী এবং তখনকার পার্লামেন্টে ছয়জন রোহিঙ্গা এমপি ছিলেন।”
মিয়ানমারের ওইসব রোহিঙ্গা মন্ত্রী ও এমপিদের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এ থেকে প্রমাণ হয় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। বর্তমান সংকটের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে এবং তার সমাধানও সেখানেই রয়েছে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়া এবং প্রতিবছর শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজার নবজাতকের জন্ম নেওয়ার তথ্যও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয়ভাবে তাদের শক্তিশালী মানবিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ। নিজ দেশে একটি ভালো এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষায় থাকার এই সময়ে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সংহতি প্রয়োজন।”
রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের পর ২০১৭ সালে দুই দেশ তিনটি চুক্তি সই করেছে। প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুইবার প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু রাখাইনে অনুক‚ল পরিবেশের অভাবে বাছাই করা রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হয়নি। তাদের নিরাপত্তা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না হওয়া, জীবিকার সুযোগ এবং নাগরিকত্ব লাভের পথসহ মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে তাদের উদ্বেগ ছিল।”
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের তার বাধ্যবাধকতা অব্যাহতভাবে অমান্য করে চলার পটভ‚মিতে, বাংলাদেশ একটি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চীনের সহায়তায় প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরুর জন্য বিকল্প পথ নেয়। সেপথেও আজ পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি হয়নি।”