রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক

37

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির সামরিক বাহিনীর তাÐবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগ দুইদফায় ব্যর্থ হওয়ার পর এবার এ উদ্যোগের সাথে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সাথে সরাসরি যুক্ত হওয়ার কথা দিয়েছে চীন। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংবাদটি গুরুত্বের সাথে স্থান করে নেয়। কারণ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা ছিল রোহিঙ্গাদের ফেরানোর উদ্যোগে চীন যুক্ত হলে সংকট সমাধান দ্রæত হবে। এবার আমরা আশাবাদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আর কোন বাধা কাজ করবে না। আমরা লক্ষ করে আসছি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের জন্মভিটেয় ফেরানোর যখনি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তখনই নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্ত ছাড়াও রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব, মর্যাদা ও শান্তিপূর্ণ বসবাসের বিষয়টি অস্পষ্টতায় দায়ী ছিল। সরকার এসব বিষয় গরিব মনোযোগসহকারে লক্ষ করে নতুনভাকে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে এবং সফলও হচ্ছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান। আমরা বিশ্বাস করি, যেকোন নিরন্তর প্রয়াসে সুফল মিলে। অন্ধভাবে মিয়ানমারের পক্ষে থাকা চীনের রোহিঙ্গা ফেরতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি কূটনেতিক তৎপরতারই অংশ। জাতিসংঘের অধিবেশনে দুইদিন আগে ত্রিদেশীয় এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী চ তিন্ত সোয়ে এবং চীনের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নেতৃত্ব দেন। ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রæপে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীন ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতরা থাকবেন। ওই গ্রæপ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কাছে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করবে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি সই এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগে চীনের ভূমিকা ছিল। ভবিষ্যতে তাদের ভূমিকা আরো স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অবশ্যই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মূল পক্ষ। তবে এটি শুধু দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নয়, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক সমস্যাও বটে। এর সমাধানে বহুপক্ষীয় সংশ্লিষ্টতা দরকার। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন তিন দেশই বলেছে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে পুরো অঞ্চলে উগ্রবাদসহ নানা অপরাধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিন পক্ষের এ উপলব্ধি যথার্থ। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও সমস্যার শুরু থেকে এ কথা বলছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সরাসরি সংশ্লিষ্ট হওয়ার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।
মনে রাখতে হবে, এখনো মিয়ানমার তাদের নিজেদের তৈরি সমস্যার- কারণ স্পষ্টভাবে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করছে। এতদিন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে রোহিঙ্গা ‘জেনোসাইড’-এর কথা অস্বীকার করলেও এখন তারা কৌশলে স্বীকার করছে; তবে জেনোসাইডের দায় স্বীকারে এখনো সম্মত নয়। এসব বিষয় প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা হতে পারে। তা যাতে না হয়, সে জন্য তৃতীয় পক্ষ হিসেবে চীনের বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা আশা করি, গঠিত কমিটি রোহিঙ্গা সংক্রান্ত সকল বিষয়ে নজর রাখবে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।