রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের সক্রিয় সন্ত্রাসীরা

83

কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রূপ তৎপর হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আল-ইয়াকিনের ব্যানারে কতিপয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবকদের তালিকাভুক্তির কাজ শুরু করেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প কমিটির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল নামের এক ব্যক্তি। এই বিদ্রোহী সন্ত্রাসী গ্রূপকে প্রশাসনিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন এই হাফেজ জালাল। এছাড়া মানবপাচার, ইয়াবা, মাদক পৃষ্টপোষক এবং খ্রিষ্টান রোহিঙ্গা পল্লীর হামলার মূল হোতা এই বিতর্কিত জালাল শত অপকর্ম করেও রয়েছে বহাল তবিয়তে। গতকাল শনিবার ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের নিকট থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
একাধিক সূত্র জানায়, কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে মোহাম্মদ আলম (৪০) নামে একজনকে অপহরণ পূর্বক হত্যা করেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। গত ১৮ ফেব্রূয়ারি ক্যাম্প এলাকায় এক অপহৃত রোহিঙ্গা যুবককে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ ও রোহিঙ্গা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এঘটনায় পুলিশ ক্যাম্প ৬ এর শীর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী মৃত দলিলুর রহমানের ছেলে ছৈয়দ নুর (৪২), নুরুল ইসলামের ছেলে আনিস (২৭) সহ ৪ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করলেও রহস্যজনক কারণে মামলা থেকে বাদ পড়েন জালাল।
সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডের পাশাপাশি ক্যাম্পে হাফেজ জালালের রয়েছে ইয়াবা ও মানবপাচারের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্য মো. ছিদ্দিক ও মো. শাহজাহান
ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তারা কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা। আব্দুল মজিদ নামের আরেক সদস্য ইয়াবা চালান আনতে গিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে সীমান্তের ঘুমধুম বাইশফাঁড়ি এলাকায় স্থলমাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়। সে কুতুপালং ক্যাম্পের আব্দুল মালেকের ছেলে। একইভাবে ৩ সেপ্টেম্বর কুতুপালং ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা ইয়াবা পরিবহন করতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, হাফেজ জালাল কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গা ক্যাম্প কমিটির অফিসে বসে প্রতিনিয়ত ইয়াবা, মাদক, মানবপাচার, ধর্ষণের বিচার করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতিক্রমে এই বিচারের দায়িত্ব ও কর্তব্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাফেজ জালাল। সে ক্যাম্পের অপকর্মের ব্যাপারে সব কিছু অবগত আছে বলে জানালেও তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আল-ইয়াকিন সদস্যদের অপরাধ কর্মকান্ডে সামিল না হলে মেরে ফেলা হয় সাধারণ রোহিঙ্গাদের। ক্যাম্প-৭ এর ‘নৌকা ফিল্ড’ নামক একটি স্থানে নিয়ে গিয়ে টর্চার করা হয়েছে। আল-ইয়াকিন সদস্যদের অত্যাচার থেকে জীবনে বেঁচে থাকতে ক্যাম্প থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়া ও ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা সদস্যরা। সম্প্রতি তাদের দলে যোগ না দেওয়ায় হত্যার হুমকি দিলে স্ত্রী ও সন্তানদের ক্যাম্পে রেখে ক্যাম্প-৪ থেকে ভারতে পালিয়ে গেছে কাছিম আলীর ছেলে হাছন আলী (২৬) ও আজিজুর রহমানের ছেলে জমির হোছন (২০)।
একইভাবে আল-ইয়াকিন সদস্যদের সাথে যেতে অনিচ্ছুক মনিরুজ্জামানের ছেলে নুর ইসলাম, আলী মিয়ার ছেলে আলী আহমদ, আবুল হোছন, ছৈয়দ আলমসহ আরো বেশ কিছু রোহিঙ্গা সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের এক সাবেক রোহিঙ্গা নেতা জানান, ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল নামক একটি সংগঠনের সাথে হাফেজ জালাল সম্পর্ক রয়েছে। তাদের কোটি কোটি টাকা এনে ক্যাম্পে পাকা বহুতল ভবনের মসজিদ নির্মাণ সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করে থাকে। ইত্তেহাদুল জমিয়াতুলের পৃষ্টপোষকতার মধ্যে যারা জড়িত তারা হলেন রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল, রোহিঙ্গা নেতা ছালামত উল্লাহ, মাস্টার ইকবাল ও মৌলভী শামসুল আলম, হাফেজ নয়িম, হাফেজ তোফাইল, মৌলভী আক্তার হোছন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিনিধিরা ইয়াবা, মাদক, মানবপাচার, ধর্ষণের বিচার-সালিশ করতে পারে না, কিন্তু সাধারণ ক্যাম্প কমিটির চেয়ারম্যান এসব ইস্যুতে সালিশি বৈঠক করে জরিমানা করতে পারে? আর এত অভিযোগ থাকার পরেও কেন কুতুপালং ক্যাম্প কমিটির চেয়ারম্যান জালালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ক্যাম্প কেন্দ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও মানবপাচার, ইয়াবা, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িতদের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই বলেও জানান তিনি।