রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ চলছে

40

হত্যা, অপহরণ, মাদক ও মানব পাচার- এসব ঘটনা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ২ বছর ধরে চলে আসছিল। এসব ঘটনায় চিন্তিত ছিলেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা। এসব মানুষের নিরাপত্তায় সরকার রোহিঙ্গা শিবিরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করে। আর সেটি বাস্তাবায়নে দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
গতকাল রবিবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালীর ময়নারগুনা নামক রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসময় প্রধান সড়ক ও শিবিরের ভেতরে সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য পিলার স্থাপন করছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এসময় রোহিঙ্গারা দেখতে ভিড় করেন। সকাল থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এই কাজ অব্যাত রয়েছে।
এই শিবিরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক আহমদ (৬৭) নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে রোহিঙ্গা নিরাপত্তা জোরদার হবে। কেননা ক্যাম্পে কিছু খারাপ লোকজন ঢুকে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করে। এই কাঁটাতারের বেড়ার কারণে আগের মতো লোকজন চলাচল করতে পারবে না। এই উদ্যোগ আরও আগে নেয়ার প্রয়োজন ছিল। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই’।
নিজ ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শুরু হওয়ায় খুশি হলেও কিছু রোহিঙ্গা ভেতরে বেড়া নির্মাণের বিপক্ষে রয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘কিছু অসৎ মানুষ রয়েছে, তারা এই কাঁটাতারের বেড়া হওয়ায় নাখোশ। কেননা তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এই বেড়া বসলে হয়তো আগের মতো অপরাধ করতে পারবে না। তবে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই এই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে অনেক খুশি হয়েছে’।
জানতে চাইলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছিল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যা এখন সহজে সম্ভব হবে না’। তিনি বলেন, ‘কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে রেখে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ফলে ক্যাম্পে অনেক অপরাধ রোধ হবে’।
উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন, অপহরণ, মাদক ও মানব পাচারের ঘটনা অনেক পুরনো। এসব ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল। এখন ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুরু করেছে- এটা স্থানীয়দের মতো রোহিঙ্গাদের জন্যও ভালো হবে। কেননা ক্যাম্পে কিছু অপরাধীর জন্য পুরো ক্যাম্পবাসী ভয়-ভীতির মধ্যে থাকতে হয়। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ফলে এই ভয় কেটে যাবে। এটা সবার জন্য নিরাপদ হবে’।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত দু’বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন হয়েছে অর্ধশতাধিকের কাছাকাছি। আর মামলা হয়েছে চার শতাধিক। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক ধরণের ঝুঁকি রয়েছে। সেটি মাথায় রেখে সরকার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছে। যা ইতোমধ্যে সেটি দ্রুত বাস্তবায়নের পথে। এতে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বাড়বে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধামূলক কর্মকান্ড অনেকটা কমে আসবে’।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অল্প সময়ের মধ্যে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এ দেশে অবস্থান করছিলেন আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের প্রায় ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।