রোহিঙ্গারা ফেরত না গেলে নিরাপত্তার শঙ্কা আছে

53
নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এখন তাদের দ্রæত ফেরত পাঠানো না গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাই বিঘিœত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য মিয়ানমারকে দোষারোপও করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই সকল বাস্তুচ্যুত অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্টিতে ভুগছে। তাদের রয়েছে অনেক অভাব-অভিযোগ। এদেরকে অতিদ্রæত ফেরত না পাঠালে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্ভয়ে বসবাসের পরিবেশ  তৈরি না করার মধ্য দিয়ে প্রত্যাবসনে মিয়ানমারের অনাগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে।
সংসদে নূর মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর কাজে কোনো অগ্রগতি আছে কি না?
জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের
২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু’দেশের সম্মতিক্রমে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভ্যাব্য তারিখ হিসেবে ১৫ নভেম্বর ২০১৮ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি।
মিয়ানমারের তালবাহানার দিকটি দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাখাইন রাজ্যে যথাযথ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারে উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে মিয়ানমার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে এবং বলছে যে বাংলাদেশের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হচ্ছে।
আমরা বারবার বিভিন্ন ফোরামে বলেছি যে, এ সকল বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগণের ফেরত মিয়ানমার সরকারের উপর বর্তায় এবং তাদেরকেই উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব জনমত ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় অব্যাহতভাবে আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে একটি রিপোর্ট প্রেরণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদেরকে এ বিষয়ে কাজ করতে দিচ্ছে না। মিয়ানমারের অসহযোগিতা সত্তে¡ও আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক দুটি পথই খোলা রেখেছি।
এদিকে সরকার আগামী ৫ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। এজন্য ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলায় ৮৮টির স্থান নির্বাচন শেষ হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় উন্নয়ন ও সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখেই সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূল স্রোতধারায় আনতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম কওমি শিক্ষা মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারবে।