রোহিঙ্গারা ফিরতে না চাওয়ার নেপথ্যে

77

মিয়ানমার সেনা, বিজিপি, নাটালা বাহিনী ও রাখাইন উগ্রবাদীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে যেসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে ন্যূনতম নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলেই ফিরে যাবে বলে জানিয়েছিলেন। গত ২২ আগস্ট মিয়ানমারের ছাড়পত্র পাওয়া অনেক রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরে যেতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় তারা রাজি হননি বলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান অনেক রোহিঙ্গা। গত কয়েক দিন ধরে কেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না, সে ব্যাপারে অনুসন্ধানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও আশাপ্রদ বক্তব্য ও তথ্য মেলে।
কারা ফিরতে বাধা দিচ্ছে :
২২ আগস্ট দ্বিতীয়বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ১৯-২২ আগস্ট পর্যন্ত এআরএসপিএইচআর ও আরসার নির্দেশে এআরএসপিএইচআর ও আরসা নেতা মাস্টার কামাল ও ছৈয়দুল্লাহর নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৪৫ সদস্যের একটি গ্রুপ পাঠায় নয়াপাড়া, শালবাগান ক্যাম্পে। তারা গিয়ে সেখানকার আশপাশের ক্যাম্পের আরসা ও এআরএসপিএইচআর সন্ত্রাসীদের নিয়ে যাদের প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকা এসেছে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দেয়।
তাদেরকে ওরা বলে দেয়, সরকার ও ইউএনএইচসিআরের সাক্ষাৎকারে গিয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় ফিরবে না বলে জানিয়ে দেবে। যেহেতু সাক্ষাৎকারে ইউএনএইচসিআর রয়েছে, সেহেতু রোহিঙ্গাদের কেউ চাপ দিতে পারবে না। যদি কোনো রোহিঙ্গা তাদের নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে তাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয় বলে জানা যায়।
গত ১৬ আগস্ট ক্যাম্প-৫-এর মৌলভী অলি ও রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের মাস্টার ওসমানের নেতৃত্বে ৭৫ সদস্যের আরসা সন্ত্রাসীদের দুটি গ্রুপ রাখাইনে পাঠায় আরসা ও এআরএসপিএইচআর নেতারা। তাদের নির্দেশ দেয়া ছিল যদি কোনো কারণে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা ২২ আগস্ট রাখাইন ফেরত যায়, তাহলে ক্যাম্প থেকে যাওয়া আরসার বিশেষ সন্ত্রাসী গ্রুপ ফেরত যাওয়াদের খুন করবে অথবা গুলি করে হত্যা করবে।
ফিরে যাওয়ার সহজ প্রস্তাব :
ক্যাম্পগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যাবাসন তালিকার পরিবর্তে পাড়াভিত্তিক তালিকা তৈরি করে সে অনুযায়ী ফেরত নেয়া। কারণ আরসার সিদ্ধান্তের বাইরে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে জানমালের হুমকি রয়েছে। ১৯৭৮ ও ১৯৯৩ সালের মতো ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে না নিয়ে সরাসরি অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ পাড়া ও গ্রামে যেতে দিতে হবে। নিজ উদ্যোগে রোহিঙ্গারা তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ, মেরামত করে নেবে। অভ্যর্থনা কেন্দ্রে এনভিসি কার্ডের জন্য চাপাচাপি না করে কয়েক মাস পর যখন নাগরিকত্বের আবেদন করবে তখন এনভিসি কার্ড দেয়া যাবে। রোহিঙ্গাদের করা খসড়া ফেরত পারিবারিক ফর্ম ব্যবহার করলে কাজ সহজ হবে বলে তাদের ধারণা। ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের সমস্ত দোকানপাট, ব্যবসা, সিএনজি, টমটমসহ সব ধরনের ব্যবসা, এনজিওতে রোহিঙ্গাদের চাকরি বন্ধ করা। মিয়ানমারে চলমান সংবিধান সংশোধনে চীন, জাপান, ভারতসহ মিয়ানমারের বন্ধুদেশগুলোকে সেনাবাহিনীপ্রধানকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা। রাখাইনে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত সেখানে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও আসিয়ানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পর্যবেক্ষণ টিমকে তদারকির দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব করেন তারা।