রোহিঙ্গাদের হাতে ধারালো অস্ত্র, জড়াচ্ছে অপরাধে

17

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে কতিপয় এনজিও’র সরবরাহকৃত ‘ধারালো অস্ত্র’ রয়েছে। এ কারণে ক্যাম্পে গ্রূপিং, আধিপত্য বিস্তার, খুন, অপহরণ ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে কর্মহীন রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে দিনের পর দিন হিংস্র হয়ে উঠছে। তারা যে কোন অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না। তাই তাদের অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানান স্থানীয়রা।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ক্যাম্প থেকে বেশকিছু ধারালো অস্ত্রসহ ৬০ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় উখিয়া থানায় খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫টি মামলা করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, জব্দকৃত এসব অস্ত্রের সাথে ইতোপূর্বে শেড ও মুক্তি-কক্সবাজারসহ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহকৃত (দা, কুড়াল, নিড়ানির মত ধারালো সরঞ্জাম) কৃষি উপকরণের মিল রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের মাঝে ‘ধারালো অস্ত্র’ সরবরাহের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে। এরপর উখিয়া উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সদরের মালভিটাপাড়ায় শেড অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ ‘ধারালো অস্ত্র’ জব্দ করে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট কোটবাজারের ভালুকিয়া সড়কের কামারের দোকান থেকে এনজিও মুক্তি’র অর্ডারকৃত বিপুল পরিমাণ ‘ধারালো অস্ত্র’ উদ্ধার করে প্রশাসন। ওইসব অস্ত্রের সাথে স¤প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুই গ্রূপে সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মিল থাকায় ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসন ও সচেতন মহলকে।
উখিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. তহিদুল আলম রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে অস্ত্রমুক্ত করতে প্রয়োজনে সেনা অভিযান পরিচালনার দাবি জানান। একই সাথে ইতোপূর্বে যেসব এনজিও’র বিরুদ্ধে ‘ধারালো সরঞ্জাম’ সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ওইসব এনজিও’র কাজ বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও শেড’র সরবরাহকৃত ‘অস্ত্রের’ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রোগ্রাম অফিসার মো. শওকত বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ইতোপূর্বে প্রশাসনের জব্দকৃত কৃষি উপকরণ (ধারালো দা, কুড়াল, নিড়ানি) স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকার ওই প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে মুক্তি’র প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে গত বছর রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরিকৃত কৃষি উপকরণ (দা, ছুরি, নিড়ানি, কোদাল ইত্যাদি) প্রশাসন কর্তৃক কামারের দোকান থেকে জব্দের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমানে এসব কৃষি উপকরণ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাহউদ্দিন বলেন, ক্যাম্পে চলমান ঘটনায় ১৫ মামলায় এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বেশকিছু ধারালো অস্ত্রসহ ৬০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে।
ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এনজিও কর্তৃক রোহিঙ্গাক্যাম্পে সরবরাহকৃত কৃষি উপকরণের নামে ধারালো সরঞ্জামের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।