রোজাদারকে মিথ্যা পরনিন্দা থেকে মুক্ত হতে হবে

107

মাসব্যাপী সিয়াম-সাধনার মধ্যে মুমিন মুসলমানদের জন্য রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। মনে রাখতে হবে, রোজা নিছক উপবাসব্রতের নাম নয়, রোজা হতে হবে নিখুঁত। অনেক রোজাদার রোজার কষ্টসাধ্য উপবাসব্রত পালন করলেও মিথ্যা, পরনিন্দা,সুদ, ঘুষ, ঠকবাজির মতো জঘন্য পাপ কাজে লিপ্ত থাকায় তার কষ্টের সিয়াম-সাধনা কোন উপকারে আসবে না। অর্থাৎ তার রোজা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। একটু সাধারণ দৃষ্টিতে বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হবে রোজা রাখার সময় যেসব জিনিস বৈধ ছিল, তা আমরা করছি না। অর্থাৎ পানাহার,স্ত্রীর সাথে
মেলামেশা ইত্যাদি, আর যে সব খারাপ গর্হিত কাজ যেমন মিথ্যা, পরনিন্দা, যা রোজা ছাড়া অন্য সময়েও মুসলমানদের জন্য
কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এহেন জঘন্য কাজগুলো রোজা রেখেও যদি ত্যাগ করতে পারা না যায়, তাহলে কি এ রোজাব্রত তার কোন উপকারে আসবে? কখনোই না।
মিথ্যা হচ্ছে সকল পাপের মূল। অপরদিকে গীবত (পরচর্চা) অন্যের অনুপস্থিতিতে সমালোচনা করা আরো জঘন্য পাপ।
গীবত (পরনিন্দা) সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কেউ কারো গীবত করোনা তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো তা অপছন্দ করবে,আল কোরআন। পরচর্চাকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কাজেই এটা জঘন্য পাপ। অথচ আমরা এ নিষিদ্ধ পাপের চর্চায় থাকি সারাক্ষণ। গীবতের পরিচয় প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন, রাসুলে পাক বললেন, তোমাদের কোন ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা (শুনলে) তার কাছে খারাপ লাগবে। জিজ্ঞেস করা হলো, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে ওই দোষ বিদ্যমান থাকে, যে দোষ আমি আমি বললাম, তবুও কি গীবত হবে? রাসূলে পাক বললেন, তুমি যে দোষ ত্রæটির কথা বললে,আর যদি ওই দোষ ত্রæটি তার মধ্যে থাকে তবে তুমি তার গীবতই করলে, আর যদি তুমি যা বলেছো তা না থাকে, তবে তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিলে। ( মিশকাত শরীফ পৃ.৪১২) মিথ্যা অপবাদ গীবতের ছেয়ে মারাত্মক । গীবত হারাম,কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। সুতরাং এমন জঘন্য পাপ থেকে রোজাকে পুত পবিত্র রাখতে হবে।
রোজা রেখে মিথ্যা, পরচর্চার মতো গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সাবধান করে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন যে রোজাদার রোজা রেখেও মিথ্যা কথা এবং অন্যান্য পাপাচার থেকে বিরত থাকে না, তার পানাহার পরিত্যাগ এবং এমন রোজা আল্লাহ্ পাকের কোন প্রয়োজন নেই, এমন রোজা দ্বারা কর্তব্যের দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় সত্য, তবে-এর সত্যিকার সওয়াব লাভের আশা সুদূর পরাহত।’
অন্য এক হাদীসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন আস্ সাওমু যুন্নাতুন… ‘রোজা হলো মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ’। যেভাবে মানুষ যুদ্ধের মাঠে ঢাল দ্বারা আত্মরক্ষা করে থাকে, তেমনিভাবে রোজা দ্বারা দুর্বৃত্ত শয়তানের আক্রমণ থেকেও আত্মরক্ষা করা যায়। তাই কল্যাণকামী মানুষের জন্য রোজা হয় ঢাল স্বরূপ। তবে তার জন্য শর্ত রয়েছে, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘যতক্ষণ না সেই ঢালকে কেউ বিনষ্ট করে ফেলে।’
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে হুজুর (সা.) সমীপে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, রোজা কিভাব বিনষ্ট হয়? তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘মিথ্যা এবং পরনিন্দা দ্বারা ঢাল বিনষ্ট হয়। অর্থাৎ এর মর্যাদা ক্ষণ্ণ হয়। অতএব, প্রত্যেক রোজাদারকে মিথ্যা, পরনিন্দার মতো জঘন্য পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে, তবেই বিশুদ্ধ হবে রোজার সাধনা। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে শুদ্ধরূপে রোজা আদায়ের তৌফিক দিন। আমিন।