রেলে নতুন চক্র ‘ইয়াং ঠিকাদার’!

117

দেশজুড়ে ক্যাসিনো কান্ডে ধরপাকড় শুরু হলে গাঁ ঢাকা দেন পূর্বাঞ্চল রেলের বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। এই সুযোগে রেলের নতুন চক্রের আবির্ভাব ঘটেছে। একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিতে যুক্ত একটি চক্র রেলের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। গত কয়েক মাসে প্রকৌশল দপ্তরে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা কর্মকান্ডে তাদের বিচরণ বেড়েছে। এরা রেলের ‘ইয়াং ঠিকাদার’। একসময় চিহ্নিত কয়েকজন ঠিকাদারের পক্ষে ক্যাডার হিসেবে সক্রিয় থাকলেও এরাই এখন ঠিকাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। ভাগিয়ে নিচ্ছেন রেলের কোটি টাকার টেন্ডার।
গতকাল কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে অস্ত্র বানানোর সরঞ্জাম ও মাদকসহ ধরা পড়েছেন এ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য শেখ ফরিদ আহমদ। তার বিরুদ্ধে রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, হত্যা, কিশোর গ্যাং তৈরি, রেলের বাসাবাড়ি দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। এনায়েত বাজার রাণীর দিঘির পাড়ের ইসহাক ভিলার তৃতীয় তলার একটি বাসা থেকে ফরিদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন সাংবাদিকদের জানান, ‘ফরিদের নেতৃত্বে কমপক্ষে ৩০ জন শিশু-কিশোরের একটি গ্যাং আছে। তাদের ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহার করে কথিত বড় ভাই ফরিদ। সে সবসময় গ্যাং নিয়ে চলাফেরা করে। রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টারসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের কাছে শেখ ফরিদ আতঙ্কের নাম।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, শেখ ফরিদের বাসা নগরীর পলোগ্রাউন্ড মসজিদ এলাকায়। টাইগারপাস, পলোগ্রাউন্ড-সিআরবিসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত ফরিদ। রেলের টেন্ডারবাজি নিয়ে আলোচিত বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী হিসেবে এখন রেলে দাপিয়ে বেড়ান ফরিদ। ২০১৩ সালে সিআরবিতে দুইজন নিহতের ঘটনায় লিমন গ্রুপের হয়ে অংশ নিয়ে মামলার আসামিও হন। বর্তমানে লিমন আত্মগোপনে থাকলে রেলে আধিপত্য বিস্তার করেন ফরিদ। সবসময় কয়েকজন দলবেঁধে চলাফেরা করেন রেলঅঙ্গনে। বিশেষ করে প্রকৌশল দপ্তরে রয়েছে ফরিদের দাপট।
রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের সাথে আলাপকালে জানা যায়, একসময় রেলে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও সাইফুল আলম লিমনের দাপট ছিল। বর্তমানে রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। নতুন কমিটির হাতেই এখন ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ। বাবর ও লিমন আত্মগোপনে থাকায় একসময় তাদের অনুসারী থাকা বেশ কয়েকজন উঠতি ঠিকাদার প্রকৌশল দপ্তরের কাজ করছেন। এরমধ্যে দাপটের সাথেই রেলে আধিপত্য বিস্তার করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া শেখ ফরিদ আহমেদ। তার প্রতিষ্ঠান আহমেদ এন্টারপ্রাইজ বেশ কিছু কাজ করেছে। একইভাবে রবিউল হাসান নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার প্রতিষ্ঠান গড়াই করপোরেশন বাসাবাড়ি সংস্কারসহ রেলের ঠিকাদারি করছে। ফরিদ ও রবিউল সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এছাড়ার মুন্না, জিতুও লিমনের অনুসারী হিসেবে রেলের ঠিকাদারি করছেন। তবে দাপট কমলেও ঠিকাদার সমিতির নেতৃত্বে আছেন বাবরের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন । সম্প্রতি রেলের ঠিকাদারি কাজ ও বাসাবাড়ি দখলে রাখার বিষয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক। প্রকৌশল দপ্তরের দিদার নামে এক কর্মচারী এ চক্রটিকে সহায়তা করেন। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীদের অজ্ঞাতসারে প্রকৌশল দপ্তরের ওই কর্মচারী যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করেন উঠতি ঠিকাদারদের। দীর্ঘ বছর ধরে দিদার প্রকৌশল দপ্তরে কর্মরত আছেন।
রেলওয়ে ঠিকাদার সমিতির সদস্য সচিব মোহাম্মদ নওফেল পূর্বদেশকে বলেন, ‘ফরিদ ঠিকাদারিতে যুক্ত আছেন। তবে আমাদের কমিটিতে নেই। আগের কমিটিতে ফরিদ সহ-অর্থ সম্পাদক ছিলেন।’ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সবুক্তগীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি আসার পর থেকে সবার সহযোগিতা পাচ্ছি। নিয়মানুসারে কাজ পাচ্ছেন ঠিকাদাররা। কেউ বাইরে বিশৃঙ্খলা করলে সেটি আমার জানার বিষয় নয়।’