রেলের ডিজি-এডিজির দুর্নীতির সন্ধানে দুদক

97

রাহুল দাশ নয়ন
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামছুজ্জামান ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহানের দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে দুই কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক নোটিশ জারি করে যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহও করা হয়েছে। এতে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনকালে নানা কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এরমধ্যে রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত ২০০ যাত্রীবাহী কোচ ক্রয়ের কার্যাদেশ দিয়ে লোকাল এজেন্টের কাছ থেকে কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, রেলের ডিজি ও এডিজির বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। ইতোমধ্যে দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।
দুদক সূত্র জানায়, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতি পূর্বক জনবল নিয়োগ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া হতে আমদানি করা ২০০ কোচ ক্রয়ের কার্যাদেশ দিয়ে লোকাল এজেন্ট বিশ্বাস বিল্ডার্স এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ, হুন্ডির মাধ্যমে লন্ডনে অবস্থানরত ছেলের নিকট অর্থ পাচারসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মানিলন্ডারিং) মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপ-সহকারী পরিচালক সোমা হোড়ের সমন্বয়ে অনুসন্ধানি টিম গঠন করা হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর এ টিম ডিজি শামছুজ্জামানকে চিঠি দিয়ে আনীত অভিযোগের সবধরনের কাগজপত্র চেয়েছে।
এরমধ্যে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের উপপরিচালক থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে এসিআর জালিয়াতির কোন ঘটনা ঘটে থাকলে উক্ত ঘটনার তথ্য ও রেকর্ডপত্র, ২০০৬ সালে রেলভবনে সিএমই (প্রকল্প) থাকাকালীন সময়ে প্রকল্প বরাদ্দ থেকে আট কোটি টাকা খরচ করার জন্য যে অডিট আপত্তি হয়েছিল তার তথ্য, ২০১১ সালে রেলভবনে সিএমই চট্টগ্রাম থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতির খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে যে কমিটি করা হয় তার তথ্য ও তদন্ত প্রতিবেদন, ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সিএক্স কোলাকো, পার্বতীপুর এর রিকুইজিশনের ভিত্তিতে শিরিজা মেটাল এবং বিশ্বাস বিল্ডার্স নামীয় কোম্পানির মাধ্যমে রেল ইঞ্জিনের মেরামত সংক্রান্ত তালিকা ও মেরামতকৃত মোটরের কতগুলো চালু, বিকল রয়েছে তার তালিকা, গত ১০ বছরে শিরিজা মেটাল এবং বিশ্বাস বিল্ডার্স লি. বাংলাদেশ রেলওয়ের যেসব মেরামতের কাজ করেছে তার প্রকল্প ও আর্থিকমূল্যের তালিকা, ফেরদৌস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ রেলওয়ের দুইধরনের ইঞ্জিনে জন্য মটর সরবরাহ করেছে সে সংক্রান্ত তথ্যাদি অনুসন্ধান করছে দুদক।
অন্যদিকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে রেলওয়ে ক্যাটারিং বাণিজ্য করে ছয় কোটি ৮৫ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী এক চিঠি মারফত মিয়া জাহানের কাছ থেকে যাবতীয় তথ্যাদি চেয়েছেন। এরমধ্যে মো. মিয়া জাহান অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অপারেশন) দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বনলতা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে ক্যাটারিং এর আওতায় বিরিয়ানি, কলা, পাউরুটি, চিকেনফ্রাই ইত্যাদি বিক্রি করা সংক্রান্ত সরকারি আইন, বিধি বিধান, সার্কুলার, কোন দরপত্র, কোটেশন প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে বা রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তা পরিচালনা করা হয়ে থাকলে দরপত্র আহŸান, কার্যাদেশ, বিল প্রদান সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। একইসাথে ক্যাটারিং এর জন্য বিক্রি বাবদ আদায়কৃত ও সংগৃহীত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। চিঠি পেয়ে এসব তথ্য দুদকের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দুদক প্রধান কার্যালয়ের চিঠি পেয়ে দুই কর্মকর্তাই নিজেদের কাছে থাকা যাবতীয় তথ্যাদি সরবরাহ করেছেন।