রেলসেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহ লৌকিকতা নয়, সেবা ও নিরাপত্তাই যেন নিশ্চিত করা হয়

39

রেল নিয়ে উপখ্যান এবং স্বপ্নের নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য রেলের বিকল্প আর কিছু আছে বলে আমাদের মনে হয় না। উপনিবেশ ব্রিটিশদের অনেক কিছু আমাদের পছন্দ না হলেও তারা যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে আধুনিকতার ছোঁয়া আমাদের স্পর্শ করার সুযোগ দিয়ে গেছেন, তার জন্য তাদের আমরা কিছুটা হলেও স্মরণে রাখছি। ব্রিটিশদের অবদানের উল্লেখযোগ্য খাতটি হ”েছ রেল। ব্রিটিশরা এখান থেকে প্রস্থান করেছে সাতদশক অতিবাহিত হয়েছে প্রায়। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া রেল সেই অনুপাতে বেশিদূর এগুইনি। স্বাধীন ভারত রেল যোগাযোগে রীতিমত বিপ্লব সাধন করলেও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ পেছনের দিকেই বরং হাঁটছে। কমদামে আরামদায়ক এ ভ্রমণ খাতটি বরাবরই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। সাধারণ যাত্রীদের রেল ভ্রমণে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এ খাতটি একটি অলাভজনক খাতে পরিণত করা হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। বর্তমান সরকার প্রথম দফায় দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ খাতটিকে লাভজনক এবং গণমুখী করার লক্ষে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিশেষকরে, রেল মন্ত্রণালয় নামে নতুন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও মন্ত্রী নিয়োগ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে বিভিন্ন সীমান্তে পুরনো রেললাইন খুলে দেয়াসহ ও সংস্কারের উদ্যোগ, বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলো সংস্কার করে পুনঃচালুর উদ্যোগ, অভ্যন্তরীণ পুরনো রেললাইন সংস্কার,সম্প্রসারণ, নতুন নতুন বাস আমদানি করে রেলকে আধুনকায়ন ও রাজধানী ঢাকা-চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি। কিন্তু সরকার এ খাতটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে যে দৌড় শুরু করছে; রেল বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টরা সেইভাবে দৌড়াতে পারছেন কিনা, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-সিলেট ও রংপুরে পরপর কয়েকটি রেল দুর্ঘটনা রেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এরমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হয়েছে রেলসেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহ। রাজধানী ঢাকার কমলাপুরে মন্ত্রী নিজেই উপস্থিত হয়ে এ সেবা সপ্তাহর উদ্বোধন করেন। রেলের শীর্ষকর্তা টেবিল নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে বসে যাত্রীদের অভিযোগ শোনার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযোগ নেয়ার আয়েশি আয়োজনে যাত্রীদের তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। চট্টগ্রামে রেল কর্তৃপক্ষ ব্যাপক আয়োজনে দিবসটি পালন করলেও দৈনিক পূর্বদেশ লিখেছে, সেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রথম দিনেই অব্যবস্থাপনায় ভরপুর ছিল। দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বুধবার সকাল ১১টায় সেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় ১২টা ২০ মিনিটে। পরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক এসে মহানগর এক্সপ্রেসের একটি কোচে উঠে যাত্রীদের চকলেট ও ফুল দিয়ে স্বাগত জানান এবং বেলুন উড়িয়ে সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন।
এ সময় আয়োজিত সভায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেবা সপ্তাহ পালন করা হ”েছ। আমরা এ সপ্তাহ পালনে রেল সেবা ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়েছি। ইতোমধ্যে সাতটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এরা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে সমস্যা চিহ্নিত করবে। কোথাও সেবায় ঘাটতি আছে কিনা কিংবা নতুন সেবা দেয়ার বিষয়গুলো টাস্কফোর্স দেখবে। রেল নিরাপত্তায় অপারেটিং দক্ষতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করবে তারা। এছাড়া লাইন ক্লিয়ার, যাত্রীর সেবার মান উন্নয়ন, খাবারের মান, লেবেল ক্রসিং নিরাপদ অপারেটর, কোচ, রেল লাইন, সিগন্যাল, রিলিফ ট্রেন ও ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে কাজ করবে টাস্কফোর্স। রেল সেবার কথা তুলে ধরে জিএম বলেন, ‘স্টেশনের এপ্রোচ রোড পরিষ্কার-পরি”ছন্ন রাখা, টিকিট মূল্য দেখভাল করা, টয়লেট পরিষ্কার রাখা, যাত্রী অভিযোগের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা, সঠিক সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ক্যাটারিং সার্ভিসের মান যাচাই করতে টাস্কফোর্সকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন রেল অনেকদূর এগিয়েছে। কয়েক বছর পর সবকিছু দৃশ্যমান হবে।’ আমরা রেল মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিকে স্বাগত জানাই। আমরা জানি, রেলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন, রেলের কোথায় কি সমস্যা। সরকারের ব্যাপক আন্তরিকতা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীল আচরণের অভাবেই মূলত রেল তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। আমরা মনে করি, লৌকিক আনুষ্ঠানিকতা নয়; রেলের সেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহ সফল ও স্বার্থক করতে হলে রেলকে গণমুখী করতে হবে। আর এর জন্য অবশ্যই রেলের সাথে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা, সততা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।