রেলওয়ে ওয়ার্কশপের অবকাঠামো উন্নয়ন এক প্রকল্পেই যুগ পার

106

পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পর অবকাঠামো উন্নয়নে বড়ধরনের প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। দীর্ঘ সময় ধরে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় থাকা ওয়ার্কশপকে নতুনরূপে সাজাতে ২০০৭ সালে উন্নয়নের এ উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল। মাঝখানে পার হওয়া এক যুগের এ সময়ে ওয়ার্কশপের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। বারবার সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের প্রথমদিকে দাতা সংস্থার ঋণ না পাওয়ায় প্রকল্প কাজ শুরু করা যায়নি। জাইকা প্রথমে প্রকল্পে অর্থায়ন করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সরে যায়। পরে জাপানী সংস্থা অর্থায়নে এগিয়ে আসে। এরপর নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প কাজ শুরু করতে না পারায় দুইদফা ডিপিপি সংশোধনও করা হয়। এতে ব্যয়ও বেড়েছে দুই দফা। এরমধ্যে ২০১৫ সালের দিকে প্রকল্প কাজে গতি আসলেও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৪৬ কোটি টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। বর্তমানে পাঁচটি প্যাকেজে এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১৮ কোটি ২৫ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘এখন ওয়ার্কশপে গাড়ি যা রাখছি তা কাজ করছি। এখন দশটি গাড়ি নিয়মিত রাখা যাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনটি শর্তের একটি পূরণ হয়েছে মাত্র। লোকবল ও বাজেট পাওয়া গেলে আরো বেশি সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে। এরমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরেকদফা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি অনেক আগে নেয়া হলেও দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় শেষ হতে দেরি হচ্ছে।’
জানা যায়, পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ড্রেনেজ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ, ওয়ার্কশপ শেডের ভেতর ও বাইরে রেললাইন নির্মাণ, শপের ভেতর পানিপড়া রোধ, নতুন প্ল্যান্টস স্থাপন, নতুন মেশিন সংযোজন, ওয়ার্কশপ ট্রেনিং ইউনিট উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্প উন্নয়নে বরাদ্দ হওয়া ৩১৮ কোটি টাকার মধ্যে জাপানের ডিআরজিএ-সিএফ সংস্থা ঋণ সহায়তা দেয় ১৭৫ কোটি টাকা। বাকি ১৪৩ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হচ্ছে।
যান্ত্রিক বিভাগ সূত্র জানায়, দুই দফা সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে। যে সময় প্রকল্পটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় সে সময় বাস্তবায়ন করা গেলে এত টাকা লাগতো না। অর্থায়নের অভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কিছুটি বিলম্ব হয়েছে। পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০৭ সালের ১ জুলাই প্রথম অনুমোদন পেলে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪৬ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ২১৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা করা হয়। ২০১৮ সালের ৮ মে দ্বিতীয় সংশোধনীতে আরো ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে তা ৩১৮ কোটি ২৫ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা করা হয়। ২০০৭ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও মূলত কাজে গতি আসে ২০১৫ সালে প্রথম সংশোধনীর পর।
মেয়াদ বৃদ্ধি ছয়বার : ২০০৭ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে কার্যকাল ধরা হয়েছিল ২০০৯-১০ অর্থ বছর পর্যন্ত। পরবর্তীতে প্রথম ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১০-১১, দ্বিতীয় ধাপে ২০১৩-১৪, তৃতীয় ধাপে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৫ সালে নতুন আরডিপি অনুমোদিত হলে চতুর্থ ধাপে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর, পঞ্চম ধাপে ২০১৯ সালের ৩০ জুন ও ষষ্ঠ ধাপে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা : দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজের মধ্যে ডবিøউডি-১ প্যাকেজের প্রায় ৯০ শতাংশ, ডবিøউডি-২ প্যাকেজের প্রায় ৯০ শতাংশ ও জিডি-১ প্যাকেজের প্রায় ৯০ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জিডি-১ প্যাকেজের আওতায় প্ল্যান্টস মেশিনারির মধ্যে ৪৯ টাইপের এ-ক্যাটাগরির আট টাইপ, বি-ক্যাটাগরির ২৭ টাইপ, সি-ক্যাটাগরির ১৩ টাইপের ১০২টি মেশিন আমদানি করা হয়েছে। মেশিনগুলো ইন্সটলেশন এবং কমিশনিং এর কাজ চলমান আছে। এছাড়াও ডবিøউডি-১ এবং ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের সংশ্লিষ্ট নতুন প্যাকেজ ডবিøউডি-১ (এ) ও ডবিøউডি-২ (বি) চুক্তি গত মার্চ মাসে স্বাক্ষরিত হয়। ওভারহেড ক্রেন স্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শপের কলাম মজবুত ও নতুন কলাম নির্মাণ কাজ ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত থাকায় দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হলেও ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় দীর্ঘদিন কাজ হয়নি। অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভেরিয়েশন কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরেই ১১২ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ১৪৩ কোটি ৫৭লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।
পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক এফএম মহিউদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওয়ার্কশপের সক্ষমতা বাড়বে। এ প্রকল্পটি রেল ওয়ার্কশপের জন্য খুবই উপযোগী। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে অনেক বেশি গাড়ির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে। এতে যাত্রী পরিবহনেও গতি আসবে রেলে।