রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট সর্বত্র সবার জন্য

334

জ্ঞানী-গুণীজনেরা বলেছেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য-জীবন জীবনের জন্য’ এবং সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ যা করতে পারে পৃথিবীর অন্য কোন প্রাণীর পক্ষে তা করা সম্ভবপর নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জ্ঞানীগুণী সমাজসেবক মহৎপ্রাণ মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন।
১৮২৮ সালের ৮ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের রুভার দেইনিতে জীন হেনরী ডুনান্ট জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জীন জ্যাকুয়াস ডুনান্ট এবং মাতা এ্যানা এন্টো ইনেট কোলাডন। ১৮৫৯ সালের ২৪ শে জুন উত্তর ইতালীর সলফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অষ্ট্রিয়ার মধ্যে মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে সমাজসেবামূলক কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হন যা তিঁনি অমৃত্যু জড়িয়ে ছিলেন। ১৮৬২ সালের নভেম্বর মাসে A Memory of Solferino (সলফেরিনো স্মৃতি) নামক গ্রন্থ রচনা করেন, যা পৃথিবীতে সে সময়ে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৮৬৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি হেনরী ডুনান্ট ও অপর ৪ জন সদস্য নিয়ে Committtee of Five গঠন করেন। ১৮৬৩ খ্রীঃ ২৬ অক্টোবর বিশ্বের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক মানব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রসের জন্ম লগ্নে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০১ খ্রীঃ ডিসেম্বর মাসে শান্তিতে তিনি প্রথম ‘নোবেল’ পুরস্কার লাভ করেন । ১৯১০ খ্রীঃ ৩০ অক্টোবর পূর্ব সুইজারল্যান্ডের হেইডনে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ।
১৮৫৯ সালের ২৪ জুন তৎকালীন ইউরোপের দুই বৃহৎ শক্তি ফ্রান্স ও অষ্ট্রিয়ার মধ্যে ইতালীর এক পল্লী প্রান্তর সলফেরিনোতে তুমুল যুদ্ধ হয়। মোট তিন লক্ষ সৈন্যের মাত্র ১৫ ঘণ্টা যুদ্ধে শুধুমাত্র আহতদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ হাজার। একদিকে বিজয়ী সৈন্যরা বিজয় উৎসবে মত্ত আর অন্যাদিকে ৪২ হাজার আহত মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার আর্তনাদ। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মানব জীবনের প্রতি এই চরম অবজ্ঞা মানবসেবী ডুনান্টের হৃদয়ে দারুণভাবে রেখাপাত করে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর সকল ব্যবসায়িক কর্মসূচি বাতিল করে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের সংগঠনসমূহঃ আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইআরসি) ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) ও জাতীয় রেড ক্রস’ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সমন্বয়ে বিশ্বব্যাপী রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি বা আইসিআরসি হচ্ছে রেডক্রস আন্দোলনের জন্মদাতা সংস্থা। ১৮৬৩ সালে ২৬শে অক্টোবর জেনেভা অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গঠিত রেডক্রসই হচ্ছে আইসিআরসি সংগঠনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সুইজারল্যান্ডের ২৫ জন নাগরিক নিয়ে এই কমিটি গঠিত। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধকালীন সময়ে আইসিআরসি আহত সামরিক/বেসামরিক লোকের সেবা যুদ্ধক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে আহতদের চিকিৎসা নিপাপত্তার ব্যবস্থা ও ফিল্ড হাসপাতালের ব্যবস্থা করে থাকে। যুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়ে যুদ্ধ বন্দীদের তদারকী ও বিনিময়ের ব্যবস্থা করে থাকে। জেনেভা কনভেনশনের সংরক্ষণ ও প্রয়োগ কেবলমাত্র আইসিআরসি সম্পাদন করে থাকে। এ যাবৎ ৪টি জেনেভা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত এই কনভেনশনে পূর্ববর্তী সকল কনভেনশনের বিধিসমূহ চূড়ান্ত করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি)বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সমূহের সমন্বয়ে ইন্টারন্যানাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস ও রেড ক্রিসন্টে সোসাইটিজ গঠিত। ১৯১৯ সালে ৫ই মে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্থায়ীভাবে এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। আইএফআরসি বিশ্বের সকল জাতীয় রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সমূহের মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুঃস্থদের সাহায্যার্থে বহুবিদ সেবামূলক কাজ করে থাকে। ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাসের সাধারণ পরিষদের সভায় লীগ অফ রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ এর নাম পরিবর্তন করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ করা হয়।
নামকরণ ও প্রতীক ঃ আইসিআরসি একটি নিরপেক্ষ সংস্থা হিসাবে পৃথিবীর দেশে দেশে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিরাপত্তার সুবিধার্থে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই প্রয়োজনবোধ থেকেই সহজেই চেনা যায় এমন একটি প্রতীক নির্ধারণ করা হয় এবং তা হল সাদা জমিনের উপর লাল ক্রস চিহ্ন। যা সেবক দল বাহুবন্ধনী হিসেবে ব্যবহার করবে। এই অসাধারণ চিহ্ন কার দ্বারা প্রস্তাবিত তা পরিস্কার নয়। তবে যাই হোক প্রতীকটি সুইস পতাকার অনুরূপ বিপরীত রঙের (অর্থাৎ সাদা জমিনে লাল ক্রস চিহ্ন)। উক্ত সম্মেলনের প্রতিনিধিবৃন্দ আজকের পৃথিবীতে সর্বাধিক পরিচিত একটি প্রতীকই শুধুমাত্র নির্বাচন করেননি বরং যে মাটিতে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই সুইজারল্যান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৮৬৪ সালে জেনেভা কনভেনশনে সার্বজনীন প্রতীক হিসেবে কোন প্রকার আপত্তি ছাড়াই সকল দেশ কর্তৃক ‘রেডক্রস’ প্রতীকটিকে স্বীকার করে নেয়া হয়। কিন্তু তা সত্তে¡ও ১৮৭৬ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের সাথে যুদ্ধ হলে থেকে বিভিন্ন মহল উক্ত প্রতীকটিকে খ্রীস্টান ধর্মের একিট ‘চিহ্ন’ বলে উলে­খ করতে থাকে। এবং ভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের দাবী তুলতে থাকে। তখন তুরস্কের জাতীয় পতাকার অনুরূপ বিপরীত রঙের রেড ক্রিসেন্ট প্রতীক ব্যবহার করেন। অতঃপর ১৯২৯ সালের কুটনৈতিক সম্মেলনে কিছু আপত্তি সত্তে¡ও আরো দুইটি প্রতীককে মেনে নেযা হয়। সেগুলো হল রেড ক্রিসেন্ট এবং ও রেড লায়ন এন্ড সান। ১৯৪৯ সালের কুটনৈতিক সম্মেলনে প্রতীক দুইটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা তিনটি প্রতীককে একই লক্ষ্য ও আদর্শ ব্যবহারের অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু আবার ১৯৮০ সালে রেড লায়ন এন্ড সান সোসাইটি (ইরান) তাদের প্রতীক পরিবর্তন করে। ফলে বর্তমানে এই সংস্থার প্রতীক দুইটি (১) রেডক্রস (২) রেড ক্রিসেন্ট ও (৩) রেড ক্রিস্টাল।
১৯১০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর হতে সারা বিশ্বে ৮ মে তাঁর জন্মদিনকে সম্মান দেখিয়ে ‘বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক, মানব হিতৈষী ও শ্রেষ্ঠ মানব। সেই জন্যই তিনি পেয়েছিলেন শান্তিতে প্রথম নোবেল পুরস্কার। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ কোটি কোটি মানব সন্তান বিপন্ন মানবতার সেবায় নিয়োজিত। তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষকে এক পতাকাতলে একই কর্মসূচিতে একত্রিত করেছিলেন। সাম্য মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন মানব সন্তানদের।
মহাত্মা জীন হেনরী ডুনান্ট প্রতিষ্ঠিত রেডক্রস/রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ১৮৬৩ সাল হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫০ বছর (সার্ধশত বছর) নিরলস ও নিঃস্বার্থভাবে সারা পৃথিবীতে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এবারের বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় খড়াব (ভালবাসা)।
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটির পূর্ব পাকিস্তান শাখা বাংলাদেশের জাতীয় রেডক্রস সোসাইটি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৮ সালে ৪ এপ্রিল হতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি প্রশাসনিক জেলায় ৬৪টি ও ৪টি সিটি করপোরেশনে ৪টি সর্বমোট ৬৮টি ইউনিট রয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সারাদেশব্যাপী নানাবিধ আর্তমানবতার সেবা ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে সরকার প্রধান সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত করেছে (পিও ২৬/১৯৭৩)। সেহেতু, দেশের সার্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং আর্তমানবতার সেবায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায়িত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি স্বাভাবিক সময়ে ও প্রতিটি দুর্যোগে ৬৮টি ইউনিট এর স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিপন্ন মানবতার কল্যাণে সোসাইটির ৫টি বিভাগের আওতাধীন ২৬টি অধিদপ্তরের মাধ্যমে গণমানুষের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত। যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহতদের সেবা ও নিহতদের সৎকার করার উদ্দেশ্যে রেডক্রসের জন্ম হলেও এর সেবা ও কর্ম-পরিধি বর্তমানে ব্যাপক এবং বিস্তৃত । সোসাইটি মূলতঃ সকল প্রকার দুর্যোগে গণমানুষের মানবিক প্রয়োজনে সাড়া প্রদান করে থাকে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে সংঘটিত শতাব্দীর প্রলয়ংকারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গণমানুষের সেবায় সোসাইটির ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের জন্য দেশের দুর্যোগ প্রবণ ৩৫টি জেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী অসহায় গণমানুষের বিপদাপণœতা লাঘবে সোসাইটি ১৯৯৭ সাল হতে ‘সমাজ ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মসূচি’র মাধ্যমে গণমানুষের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছ¡াসে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক জীবনহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হলে ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’ ( সিপিপি ) নামে একটি বিভাগ চালু করে। বাংলাদেশে সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ ৭১০ কিঃ মিঃ প্রলম্বিত এলাকাজুড়ে বসবাসকারী সর্বাধিক বিপদাপন্ন জন গোষ্ঠিকে সম্ভাব্য দুর্যোগ হতে তাঁদের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার নিমিত্তে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উপর ভিত্তি করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এ কর্মসূচির আওতায় ১১টি উপকূলীয় জেলার ৩১ টি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতায় উপকূলীয় গণমানুষের মধ্যে ঐঋ ও ঠঐঋ রেডিও সেট ও মাইক এর মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সংকেত প্রদান, সচেতনতা মূলক প্রচার, দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণাদান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান, দুর্যোগের পরে অপসারণ, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং তাৎক্ষণিক ভাবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণসহ জরুরী ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৯১ সালে সংঘটিত প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে সোসাইটির উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম সারা বিশ্বে সেবার অনন্য মডেল হিসাবে আস্থা অর্জন করেছে। উপকূলীয় এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক জনগণকে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার ও দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণাদানের ফলে বিগত ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সংঘটিত প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ও ‘আইলা’ ১৯৯১ সালের মত জীবন ও সম্পদ এর ক্ষতি হয়নি।
পৃথিবীর সকল দেশের মত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বাস্থ্য সেবার কর্মসূচির অধীনে এ দেশের গণ মানুষের সেবায় ২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৫টি স্বয়ংসম্পূর্ণ অত্যাধুনিক মাতৃসদন হাসপাতাল, ৬৮টি গ্রামীণ মাতৃসদন কেন্দ্র, ৩টি আউটডোর ক্লিনিক, ২টি চক্ষু ক্লিনিক, ৬টি রক্ত কেন্দ্র, ১টি নার্সিং স্কুল, ৩টি ধাত্রী বিদ্যা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এইচ আইভি /এইডস ও এ্যা¤ু^লেন্স সার্ভিস এর সক্রিয় ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা, জরুরী মেডিকেল টিমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে।
আজকের শিশু আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। একজন সৎ, যোগ্য ও প্রশিক্ষিত নাগরিক দেশের অমূল্য সম্পদ। স্কুল কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী বা যুব শ্রেণীর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সোসাইটির যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সোসাইটির অধিকাংশ কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রশিক্ষিত যুব স্বেচ্ছাসেবকগণই প্রতিটি দুর্যোগে গণমানুষের সেবায় আন্তরিক ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে সরকার প্রধান সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত করেছে। সেহেতু, দেশের সার্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং আতৃ মানবতার সেবায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতীয় সদর দপ্তর সরাসরি এবং ইউনিটের মাধ্যমে বিপন্ন মানবতার সেবায় বিভিন্নমুখী কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যেমনঃ দুর্যোগ ত্রাণ ও পুনবার্সন কার্যক্রম, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), সিসিএ, ভিটুআর, স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম, অনুসন্ধান, সমাজ ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিবিডিএম), ওডি, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম , রক্তদান কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম , সিইপি, রেড ক্রিসেন্ট নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রচার এবং প্রসার, ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান কর্মসূচি (ইউডিআর) প্রভৃতি।
বিশ্ব রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট দিবস-২০১৯ এর এই দিনে বাংলাদেশের আপামর জন সাধারণের প্রতি আকুল আবেদন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসুন।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ভালবাসা সর্বত্র সবার জন্য’।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ভাইস চেয়ারম্যান, রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট।