রেজাউলের ৩৭ প্রতিশ্রুতি ৮টিতে অগ্রাধিকার

20

‘রূপসী চট্টগ্রাম আমার-আপনার অহঙ্কার, অঙ্গীকার-সবার যোগে সাজবে নগর’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে প্রকাশিত সাত পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এর মধ্যে আটটি প্রতিশ্রুতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী ১০০ দিনের মধ্যেই সব ত্রূটি, প্রতিবন্ধকতা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করারও ঘোষণা দেয়া হয়। তবে বরাবরের মতো এবারো নগরবাসীর পুরানো সমস্যা জলাবদ্ধতাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
ইশতেহারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসীর জন্য যা কিছু বাস্তবে রূপ দেয়া যায় তাই করা হবে। এই শহরকে উন্নত স্বপ্নের শহর সাজাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এক জায়গায় আনবো। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। অতীতকে ভুলে সামনে যাবো। সবার সাথে পরামর্শ করে, সবার মেধা কাজে লাগাবো। হোল্ডিং ট্যাক্সের কথা উঠলেই তা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা যায় না। সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। বিধিবিধান মেনেই এ সমস্যা সমাধান করা হবে। আমার চিন্তাধারার সাথে অতীতের ব্যক্তিদের চিন্তাধারার মিল পাবেন না।’
সাত পৃষ্ঠার লিখিত ইশতেহার পাঠকালে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘অঙ্গীকারের স্বপ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সকলের সহযোগিতা পেলে যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতবো বলেই আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী। আমার মেধা-মনন, কর্ম সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার আসল অঙ্গীকার।’
নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭টি অঙ্গীকারের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন, ১০০ দিনের অগ্রাধিকার, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়ক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটন রাজধানী হবে চট্টগ্রাম, হোল্ডিং ট্যাক্সকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
এই আটটি প্রতিশ্রুতি ছাড়াও সব উন্নয়ন কাজে প্রতিনিধি হিসেবে জোরদার ভূমিকা ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন, নাগরিক পরিসেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু, চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ ও ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না করে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখা, বøু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস-প্লাবন থেকে নগর সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া, কর্ণফুলী ও হালদা নদী দখল-দুষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ-স্টিমার সেবা চালু করে নগর পরিবহনে চাপ কমানো, মশকমুক্ত নগর গড়তে কার্যকর ও পরিবেশ উপযোগী কীটনাশক প্রয়োগ, অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখল নিরুৎসাহিত করা, আধুনিক পাবলিক টয়লেট ও মহিলাদের জন্য নিরাপদ টয়লেট তৈরি করা, সব সড়ক ও গলি উপ-গলিতে পর্যাপ্ত এলইডি সড়ক বাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো। স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া, স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে সাতটি উদ্যোগ গ্রহণ, রাজস্বসহ সব সেবাখাতের নিজস্ব পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা, সেবা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে নগরীর সব উন্নয়ন ও সেবাখাত এক ছাতার নিচে আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নাগরিক নিরাপত্তা জোরদারে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে অপরাধ নির্মূল কমিটি গঠন করা, সাইবার দুষণ ও আসক্তি নির্মূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রাখা, নিজস্ব নিরাপত্তা সুরক্ষায় কিশোরীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা এবং মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে প্রতি ওয়ার্ডে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মেয়েদের জন্য আলাদা পরিবহন সেবাসহ নগরীতে যাত্রীসেবা উন্নত ও আধুনিকায়ন করতে পর্যাপ্ত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালু, দুস্থ ও বিশেষ চাহিদার নাগরিক ও শিশুদের বাড়তি যত্ন ও সেবার পাশাপাশি তাদেও মেধাবিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কারিগরি ও আত্মকর্মসংস্থান উপযোগী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইন্টারনেট শিক্ষাকেন্দ্র চালু, নগরীর উন্মুক্ত স্থান বা সরকারি জমি লিজ নিয়ে আধুনিক ইকোপার্ক, থিমপার্ক, শিশুপার্ক গড়ে তুলে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা, রাস্তার যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, হাইড্রলিক হর্ন, বিশেষ করে রাত দশটার পর মাইক ব্যবহার ও শব্দ দুষণ বন্ধ করা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও সৃজনশীল সব কাজে উৎসাহ ও বইপড়া কর্মসূচি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামুলক করা, বহুমুখী সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল পাঠাগার কমপ্লেক্স গড়ে তোলা, বিউটিস্পট পাহাড় কাটা বন্ধ, জলাধার, পুকুর দিঘি ভরাট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় গৌরবের সবচেয়ে বড় কীর্তি মুক্তিযুদ্ধেও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ, বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ ও সুরক্ষায় মনোযোগ দেয়া, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধ লাঞ্ছিতদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া, কিশোর অপরাধের কারণ ও কিশোর অপরাধী গ্যাং, মাদক ও অপরাধের আখড়া গুঁড়িয়ে দিয়ে নাগরিক স্বস্তি নিশ্চিত করা, নাগরিক তথ্যসেবাসহ সব সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সমন্বয়ক করে সর্বস্তরের বিশিষ্ট নাগরিক সমন্বয়ে করে মহল্লায় মহল্লায় নাগরিক উদ্ধুদ্ধকরণ পর্ষদ গঠন, বিশেষ করে বøু ইকোনমি বা সুনীল সমুদ্র অর্থনীতি সংগ্রহে মন্ত্রী, নেতা, এমপি ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল এজেন্সি ও সেবা সংস্থা প্রধানদের সাথে বসে সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষা ও আহরণে জোর দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় ইশতেহারে।
ইশতেহার ঘোষণকালে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. অনুপম সেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, নঈম উদ্দিন চৌধুরী, আলতাফ হোসেন বাচ্চূ, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক চন্দন ধর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহাজাদা মহিউদ্দিন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম, যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য প্রমুখ।