রূপালী ইলিশ ধরার অপেক্ষায় জেলেরা

86

সাগর থেকে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে তিন সপ্তাহ আগে। এখন রূপালী ইলিশ ধরার জন্য অধীর অপেক্ষায় জেলেরা। তাই সাগর পাড়ে এখন বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। যদিও আশানুরূপ ইলিশের দেখা এখনও পায়নি জেলেরা। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়ার কারণে সীমিত পরিমাণ মাছ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে প্রচুর ইলিশ ধরা সম্ভব হবে বলে বলছেন জেলেরা।
ইলিশ ঘিরে সাগর পাড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। সাগর থেকে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা তিন সপ্তাহ আগে উঠে গেলেও নিয়মিত সংকেত (সিগন্যাল) দিয়ে আসছে আবহাওয়া অফিস। এ কারণে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে যাওয়ার সাহস করছেন না জেলারা। সমুদ্রে সতর্ক সংকেত থাকলেও সীমিত আকারে ট্রলার নেমেছে সাগরে। সাগরে নামা এসব ট্রলার ফিরছে ইলিশ নিয়ে। ছোট-বড় সব সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে জালে। ইলিশ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ সাগর পাড়ে। যদিও চাহিদার তুলনায় ধরা পড়া ইলিশ এখনও নগণ্য। সাগরের সংকেত উঠে গেলে বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাঙালির কাছে যে কোনো মাছের চেয়ে অধিক প্রিয় জাতীয় মাছ ইলিশ। সব সময় বাজারে ইলিশের প্রতি থাকে মানুষের বিশেষ আকর্ষণ। তবে ছোট ইলিশের থেকে বড় ইলিশের চাহিদা একটু বেশি। বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর- এ তিন মাসে বড় ইলিশের দেখা মিলে। ফলে ইলিশ প্রিয় অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন এ সময়ের। বাজারে ইলিশ আসতে শুরু করলেও দামে তেমন কমতি নেই। বড় আকারের ইলিশ ৮শ থেকে ১২শ টাকা এবং ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩শ টাকা থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হক (বাবুল সরকার) বলেন, সীমিত আকারে ইলিশ আসছে। নিষেধাজ্ঞা উঠার পর থেকেই সাগরে সিগন্যাল চলছে। যার কারণে গভীর সমুদ্রে ট্রলার যেতে পারছে না। যে ইলিশগুলো আসছে, সেটা চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ। আশা করি, আগামী সপ্তাহ থেকে প্রচুর ইলিশ আসবে।
তিনি বলেন, এখন বাজারে ছোট আকারের ইলিশ চার থেকে পাঁচশ টাকায় এবং বড় আকারের ইলিশ ৮শ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেটা অনেক দাম। এক কেজি ওজনের ইলিশ ৪শ টাকার মধ্যে চলে আসলে বোঝা যাবে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
রাসমনি ঘাটে মাছ বিক্রি করতে আসা জেলে পরিমল বলেন, এবার বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। সিগন্যাল থাকায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া যাচ্ছে না। সিগন্যাল সরে গেলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।
ফিশারিঘাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন সব বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাঝে মধ্যে আসে। অল্প পরিমাণে আসায় দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশের দামটাও বেশ চড়া। মাঝারি আকারের (৫শ গ্রাম থেকে ৮শ গ্রামের) ইলিশ সবচেয়ে বেশি দেখা মিলছে এবার। ইলিশ আসা শুরু করায় জেলে-ফিশিং ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়তদারদের মুখে হাসি ফুটেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি করতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা বাস্তবায়ন করা হতো না। কিন্তু এবার সাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ বন্ধ রাখা হয়। এ উদ্যোগের ফলে বড় আকারের ইলিশের দেখা মিলছে এখন।
এছাড়া মা ইলিশ ডিম পাড়ে নদীতে। সমূদ্রের এ মাছটি প্রজনন মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে চলে আসে ডিম পাড়তে। এ কারণে প্রতিবছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সব ধরনের ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে। এরপর ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ইলিশ) ধরা নিষিদ্ধ থাকে।