রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী

47

তিন মাসের আমদানি খরচ হাতে রেখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টির প্রভাব ও সম্ভাবনা যাচাই-বাছাই করে দেখতে বলেছেন তিনি। দেশে বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সর্বকালের রেকর্ড।
গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এমন প্রস্তাব দিয়েছেন বলে একনেক সভা শেষে তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, ‘এটা তার অর্ডার নয়। তিনি একটা আইডিয়া তুলে ধরেছেন আলোচনার জন্য। আলোচনা-পর্যালোচনা এবং বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমরা সিদ্ধান্তে আসবো।’ খবর বাংলা ট্রিবিউনের
প্রধানমন্ত্রীর আজকের প্রস্তাব তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বকালের রেকর্ড এটা। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নিই। আমরা নিজেদের টাকা তো নিজেরাই ঋণ দিতে পারি। সরকার নিজেই ঋণ নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের পক্ষে, জনগণের পক্ষে এই টাকা সংরক্ষণ করে। রিজার্ভ তাদের আয়ত্তেই আছে। ওখান থেকে আমরা প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে পারি।’
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা হলো-এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিন্তাভাবনা করে খুঁটিনাটি দেখবে। অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর ধারণা, সাধারণত তিন মাসের আমদানি ব্যয় হাতে রাখা নিরাপদ। তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ বিদেশি টাকা যদি হাতে থাকে, তাহলে স্বস্তিদায়ক মনে করা হয়। সুতরাং তিনি মনে করেন যে, আমদানি ব্যয়ের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ হাতে রিজার্ভ রেখে বাকিটা অভ্যন্তরীণ নিজেদের অর্থে নিজেরাই ঋণ নিতে পারি এবং তুলে দিতে পারি।’
রিজার্ভ আমাদের একমাত্র ব্যাকআপ, রিজার্ভ থেকে প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়াটাকে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে আপনি যৌক্তিক মনে করেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ‘আমি সমর্থন করি দুটো কারণে। একটা হলো- আমাদের নিজস্ব টাকা ডান হাত থেকে বাম হাতে আনলাম। আবার ডান হাতে ফেরত দেব। এটা আগে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ফেরত যায়। এটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
‘আর দ্বিতীয়তটি হলো- বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক শর্ত থাকে, এটা-সেটা থাকে, সেগুলো মানতে হয়। মানতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে যায়। ঋণচুক্তি সই করার পরে প্রক্রিয়া করতে অনেক সময় দেখা যায়, এক থেকে দেড় বছর পার হয়ে যায়। তখন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। ডলারের মান বেড়ে যায়, টাকার মান কমে যায়। আমাদের নিজেদের টাকা হলে নিজেরাই খরচ করবো। ভয়ের কারণটা হলো যে ডলারটা দেব, তা ফেরত আসতে হবে। এখানে যদি ওই ধরনের কোনো ভীতি থাকে, যেটা ব্যাংকে আমাদের নন-পারফর্মিং (ঋণখেলাপি) ঋণের ক্ষেত্রে দেখেন। তাহলে আমি হাত দেব না। ওটা নিশ্চিত হয়ে আমি ঋণ করতে রাজি আছি। আমি মনে করি, এটা সম্ভব।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারি। আল্টিমেটলি জনগণের সঞ্চয় জনগণ ব্যয় করবে তাদের কল্যাণে। এজন্য নিয়ম-কানুন, নীতিমালা, চিন্তা-ভাবনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আমাদের অন্যান্য যেসব অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভাগ আছে, তারা ঠিক করবে। আমরাও পরিকল্পনা বিভাগ থেকে অবশ্যই সহায়তা দেব। এটা একটা যুগান্তকারী প্রস্তাব এসেছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।’
একনেকে ৯ প্রকল্প অনুমোদন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারের নয়টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ২ হাজার ৭৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সোমবার (৬ জুলাই) শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি জানান, একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো বিদ্যুৎ বিভাগের ইনস্টিটিউট অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুড়িং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন (২য় সংশোধনী) প্রকল্প, ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি-পাওয়ারিং (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নওগাঁ জেলার ধামুইর হাট-পতœীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলাধীন তিনটি প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং আত্রাই নদীর ড্রেজিংসহ তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং দিনাজপুর শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী সিস্টেম ড্রেজিং/খনন প্রকল্প, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলার সদর দফতরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধনী) প্রকল্প, রূপগঞ্জ জলসিঁড়ি আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন (১ম সংশোধনী) প্রকল্প, জামালপুর ও শেরপুর জেলার পল্লী অবকাঠমো উন্নয়ন প্রকল্প, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ইস্টাব্লিসমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসটেন্স অ্যান্ড সেফটি অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্প। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
একনেক সভায় এনইসি মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান গণভবন থেকে একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন।