রামুতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

10

রামু প্রতিনিধি

কক্সবাজারের রামুতে মদ্যপ স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুমূর্ষু অবস্থায় ওই গৃহবধূকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় হাসপাতালে মৃতদেহ রেখেই পালিয়ে যান স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গত বুধবার সকালে রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের পূর্ব মোহাম্মদপূরা নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত গৃহবধূ রুপিয়া আকতার (২৩) রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব মোহাম্মদ পুরানয়াপাড়া এলাকার আলমগীরের স্ত্রী এবং উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার মৃত খুইল্লা মিয়ার মেয়ে। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, স্বামীর সাথে ঝগড়ার জেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রুপিয়া আকতার। সুরতহাল ও ময়না তদন্ত শেষে বুধবার রাত ১২ টায় পৈত্রিক নিবাস দক্ষিণ মিঠাছড়ি চরপাড়া এলাকায় ওই গৃহবধূর নামাজে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।
নিহত রুপিয়া আকতারের ভাই রফিক আলম জানান, বুধবার সকালে স্বামী আলমগীর ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা আমার বোনকে মারধর শুরু করে। মারধরের এক পর্যায়ে মুখ ও গলা চেপে হত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় আমার বোন অজ্ঞান হয়ে পড়লে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় স্বামী আলমগীর ও তার বড় ভাই জাহাঙ্গীরসহ শ্বশুড়বাড়ির লোকজন মৃতদেহ রেখেই হাসপাতাল থেকে সঁটকে পড়েন।
তিনি আরও জানান, বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় আলমগীর আমাকে ফোন করে জানায়- রুপিয়া অসুস্থ; তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে দুপুরে আমিসহ পরিবারের সদস্যরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে কোথাও বোনকে খুঁজে না পেয়ে কর্তব্যরত পুলিশের কাছে বিষয়টি জানতে চাই। এসময় রুপন নামের এক পুলিশ সদস্য আমাকে জানান মর্গে একটি মৃতদেহ রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়েই বোনকে শনাক্ত করি।
রফিক আলম জানান, ৫ বছর আগে আলমগীরের সাথে রুপিয়া আকতারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৪ বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। এছাড়াও রুপিয়া ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। স্বামী আলমগীর নিয়মিত মদ ও গাঁজা সেবন করতো এবং বাড়িতে গিয়ে আমার বোনকে মারধর করতো। মারধর সইতে না পেরে রুপিয়া আকতার আমাদের বাড়িতে চলে আসে। এরই প্রেক্ষিতে ৫ মাস পূর্বে চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের লিখিত অভিযোগ দেই। এর প্রেক্ষিতে পরিষদে শালিস বৈঠকের মাধ্যমে নির্যাতন করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে রুপিয়াকে ফের শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ অমানুষিক নির্যাতনে বোনকে হারাতে হলো। এখন চার বছরের ভাগিনাও মাতৃহীন হয়ে গেলো। পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন চালিয়ে আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে রফিক আলম জানান, মৃত্যুর পর বোনের মুখে কয়েকটি জখমের চিহ্ন ছিলো। মাথার চুলও উপড়ে ফেলা হয়েছে। গলায়ও ছিলো শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন। এ নিয়ে পুলিশের কাছে আমি সুরতহাল প্রতিবেদন চেয়েও পাইনি। পরে মামলা করার জন্য আমি রামু থানা পুলিশের কাছে গেলে ওসি আনোয়ারুল হোসাইন তাদের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে মামলা করার পরামর্শ দেন।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তও হয়েছে কক্সবাজার মডেল থানার মাধ্যমে। এটার আইনী প্রক্রিয়া হলো- ওই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে। পরে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে আঘাতজনিত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে রামু থানাকে জানাবে। তখনই রামু থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা করা হবে। এমনকি বাদি না চাইলেও মামলা হবে। তাই এখন ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মঈন উদ্দিন জানান, আলমগীর ইতোপূর্বে আরও একটি বিয়ে করেন এবং ২ মেয়ে সন্তান থাকা সত্ত্বেও বনিবনা না হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে রুপিয়া আকতারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে আগের ২ মেয়েকে দেখাশোনা না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। ঘটনার দিন (বুধবার) সকাল সাড়ে আটটার দিকে আলমগীর তার স্ত্রীকে মারধর করে ৪ বছরের ছেলে সন্তানকে নিয়ে পাশর্^বর্তী দোকানে চলে যান। পরে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন রুপিয়া আকতার অভিমানে আত্মহত্যা করেছে।
অভিযুক্ত আলমগীরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। অপর অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরের (আলমগীরের বড় ভাই) মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কারণে অভিযুক্তদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।