রান্নার হলুদে মাত্রাতিরিক্ত সীসা!

40

বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গতকাল বুধবার এক সতর্ক বার্তায় বলেছে- রান্না করার জন্য যে হলুদ ব্যবহার করা হয় তাতে ক্ষতিকারক সীসা বা লেড ক্রোমেট পাওয়া গেছে। আইসিডিডিআরবি এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে আসার পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এই সতর্ক বার্তা দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- এই হলুদ ব্যবসার সাথে জড়িত সব পক্ষের বিরুদ্ধে নজরদারী করতে আগামী সপ্তাহে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইসিডিডিআরবির গবেষণায় বলা হচ্ছে ২০১২-১৩ সালের দিকে বাংলাদেশের নয়টা জেলার চেয়ে অধিক পরিমাণ পাওয়া গেছে।
পরবর্তীতে সংস্থাটি এই সীসার উৎস খোঁজার জন্য নানা ধরণের নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে হলুদে সীসার মিশ্রণ খুঁজে পান তারা।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে দেখা যায় এই সীসার উৎস অবৈধভাবে ব্যবহৃত রং বা উজ্জলকারক লেড ক্রোমেট। স্থানভেদে এই লেড ক্রোমেট কে স্থানীয়ভাবে পিউরি, বাসন্তী রং, কাঁঠালি বা সরষে ফুল রং নামে পরিচিত।
আইসিডিডিআরবির গবেষক ড. মাহাবুবুর রহমান বলছিলেন হলুদের রং কে আরো উজ্জ্বল করার জন্য এই লেড ক্রোমেট ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, ‘এটার উৎস খুঁজতে যেয়ে আমরা বিভিন্ন ধরণের নমুনা সংগ্রহ করি যে কি কি সোর্স হতে পারে। এক্সপ্লোর করতে যেয়ে আমরা দেখি হলুদটা যখন প্রসেস করা হয় তখন সেটাকে আরও শাইনি এবং ব্রাইট করার জন্য, চকচকে করার জন্য এরা এই লেড ক্রোমেট ব্যবহার করে’।
২০১৮ সালে একই সংস্থা একটি গবেষণা প্রতিবেদন দিয়েছিল যেখানে তারা বলেছিল গর্ভবতী মায়ের শরীরের তারা সীসার উচ্চমাত্রা পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে এই সীসার উৎস আবিষ্কার এবং সর্বশেষটাতে মায়ের রক্তে যে সীসা সেটা এবং হলুদের মধ্যে মিশ্রিত সীসা যে এক সেটা প্রমাণিত হয়েছে। ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, যদি একজন গর্ভবতী মায়ের রক্তে এই সীসা ক্রোমেট থাকে তাহলে গর্ভবতী মা যদি লেড ক্রোমেটের দ্বারা কন্টামিনেশন হয় তাহলে শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট, বা আমরা যেটাকে বলি বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ তা সঠিকভাবে হয় না। এছাড়া হরমোনজনিত রোগ বৃদ্ধি, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে’। খবর বাংলা নিউজের
গত ২৩ সেপ্টেম্বর এনভায়রণমেন্টাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে সবচেয়ে বেশি হলুদ উৎপাদন করা হয় এমন নয়টি জেলা থেকে ১৪০টি নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সাতটি জেলা থেকে হলুদে সীসা ক্রোমেট পাওয়া গেছে।
এদিকে এসব তথ্য পাওয়ার পর বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ঢাকায় প্রকাশিত ৬টি পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করেছে। খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহানের কাছে ‘শুধুমাত্র সতর্ক করে ক্ষতিকারক এই সীসা ক্রোমেট মিশ্রণ ঠেকানো কি সম্ভব?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি-এর কাছে একটা লেড ক্রোমেট ডিটেক্টর মেশিন আছে। সেটা আমরা তাদের কাছ থেকে নেব। সাথে তাদের কর্মকর্তারা থাকবেন। আগামী সপ্তাহে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ থাকবেন এসব নিয়ে আমরা মোবাইল কোর্ট করবো। যেই ফ্যাক্টরি বা উৎপাদনকারীদের কাছে পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব’।
কর্তৃপক্ষ বলছে, যদি এটি প্রমাণিত হয় তাহলে খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী ১২ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং তিনবছরের জেল বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।