রানু ও তার ছাগল ছানা টুকু

164

শহর থেকে অনেক দূরে পাহাড়ি ঢালে পাহাড়তলি গ্রামে বাস করে রানু ও তার পরিবার। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি খাল। যার নাম ঝিনাই। আর খালের শেষ প্রান্তে রয়েছে লাল মাটির উচুঁ উঁচু টিলার জঙ্গল। রানুর বয়স নয় বছর সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পড়ালেখায় খুব ভালো সে। বেশ শান্তশিষ্ট নরম সুরের মেয়ে। রানু এখন খুব ব্যস্ত সময় পার করছে। সে সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে যায় টুকুর ঘরে। টুকু হচ্ছে রানুর সব থেকে কাছের বন্ধু। যার সাথে সে সব থেকে বেশি সময় ব্যয় করে থাকে। টুকুর বয়স মাত্র দুই মাস। টুকুর মা মারা গেছে আজ পঁয়তাল্লিশ দিন হলো। যেদিন টুকুর মা মারা গেলো সেদিন রানু খুব কান্না করেছিলো। কারণ টুকুর মতোই আদর করতো টুকুর মাকে। টুকুর মা যে দিন মারা গেলো সে দিনও টুকুকেসহ টুকুর মাকে ঝিনাই খালের পাড় দিয়ে নিয়ে ঘাস খাইয়ে ছিলো কিন্তু কি এমন হয়েছিলো যে, সে দিন টুকুর মা মারা গেলো?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে পায়নি রানু! তবে যা হবার হয়েছে,এখন আর মন খারাপ করে কি লাভ। তাই তো এখন টুকুকে খুব ভালোবাসে রানু। রানু টুকুকে সব সময় দেখে শুনে রাখে। টুকু রানুর পাশে পাশে থাকে সর্বক্ষণ। রানু যে দিকে যায় টুকুও তার পিছেপিছে যায়। রানুর কথাও বেশ কিছু মেনে চলে টুকু। যাকে বলা হয় পোষমানা।
প্রতিদিন রানুর ঘুম ভাঙে টুকুর ম্যা..ম্যা.. ডাক শুনে। টুকুর ডাক শুনলেই রানু ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে ছুটে যায় টুকুর ঘরে। তারপরে শুরু হয় তার ব্যস্ততম দিন। টুকুকে ঘর থেকে বের করা। তার জন্য ভাতের মাড় গালিয়ে বোতলে তোলা আর সেই মাড় পানিতে রেখে ঠান্ডা করে টুকুকে খাওয়ানো। তারপরে আবার সকাল নয়টা বাজলেই স্কুলে যেতে হয় বারোটায় আসতে হবে। স্কুল থেকে এসেই রানু আবার ছুটে যায় টুকুর কাছে। টুকুকে নিয়ে সাধ আহ্লাদ করে আর যখনি বেলা ভাটি পরে তখনি টুকুকে কোলে করে নিয়ে চলে যায় ঝিনাইয়ের পাড়ে। ভাদাল দূর্বা কলমি আরো নান্দনিক দূর্বাদি তৃণ তুলে মুখে ধরে টুকুর। টুকু সেই ভাদাল দূর্বা কমলি তৃণ মনের সুখে একটু একটু গ্রহণ করে। রানু আবার কখনো কখনো ঘাস দেখিয়ে দিয়ে বলে ‘টুকু এগুলো খাও, নিজে নিজে খাওয়া শিখো, নিজে নিজে খাবার খেলে সেই খাবার অনেক বেশি মজা’
আর যখনি সন্ধ্যা নেমে আসে দুজনে তখন বাড়ির পথ ধরে, কেননা খালের শেষ প্রান্তে উঁচু লাল মাটির টিলা থেকে শেয়াল এসে টুকুকে নিয়ে যেতে পারে এবং আক্রমণ করতে পারে সেই ভয়ে। তাই তারা সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরে আসে। আর টুকুকে টুকুর ঘরে বিছানা বানিয়ে দেয়। টুকু ঘুমিয়ে পড়ে আর রানু নিজের ঘরে এসে নিজের স্কুলের পড়া শিখে লেখে। এভাই কাটছে রানু আর টুকুর জীবন। টুকুও একজন সদস্য রানুদের পরিবারের।