রাতের আঁধারে কর্ণফুলীর পোনা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে

39

সরকারিভাবে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করছে প্রায় পাঁচ শতাধিক জেলে। দাঁদন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পোনা সংগ্রহ করছে জেলেরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে গলদা চিংড়ির পাশাপাশি অন্যান্য মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন।
জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে একজন জেলে ৭০-৮০ হাজার পোনা সংগ্রহ করে। প্রতিটি পোনা বিক্রি হয় ৭০ পয়সা থেকে এক টাকায়। একজন জেলে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পোনা সংগ্রহ করে। এভাবে প্রতিবছর কর্ণফুলী থেকে প্রায় ৪ কোটির বেশি গলদা চিংড়ির পোনা পাচার হচ্ছে।
আনোয়ার নামে এক জেলে বলেন, বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে টেম্পু চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্ষাকালে দাঁদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহের কাজে নেমে পড়ি। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করি।
তিনি আরও বলেন, প্রায় পাঁচ শতাধিক জেলে কর্ণফুলী নদী থেকে গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করে। তবে এদের বেশিরভাগই দাঁদন ব্যবসায়ীদের নিকট অগ্রীম টাকা নিয়ে নেয়। ফলে টাকা নেওয়া জেলে এক মৌসুমে যে পোনা ধরবে সবগুলোই দাঁদন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করতে হয়। এতে করে দাঁদন ব্যবসায়ীরা জেলেদের কম দাম দিয়ে থাকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দাঁদন ব্যবসায়ীরা রাতের আঁধারে ট্রাকভর্তি করে এসব পোনা খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিয়ে যায়। বাকলিয়া, নতুন ব্রীজ ও অভয়মিত্র ঘাট এলাকার এই পোনার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে দাঁদন ব্যবসায়ী বাবুল। তিনি মূলত পোনা ক্রয়-বিক্রয়ের গদির মালিক। নতুন ব্রীজের পশ্চিম পার্শে চেয়ারম্যান কলোনীস্থ তার অফিসে গিয়ে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে থাকা তার এক কর্মচারী বলেন, পোনা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কোনো ধরনের তথ্য দেওয়ার অনুমতি নেই। তাই আমি কিছু বলতে পারবো না।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, গলদা চিংড়ির পোনা ধরতে জেলেরা অন্যান্য মাছের পোনা ধরে ফেলে। কারণ জেলেদের পোনা ধরার জালগুলোর ছিদ্র খুবই ছোট। ফলে এসব জাল দিয়ে শুধুমাত্র পানি ছাড়া আর কিছুই বের হতে পারে না। এতে করে চিংড়ির প্রজননের পাশাপাশি অন্যান্য মাছের প্রজননও ব্যাহত হয়।
তিনি বলেন, আমরা কোস্টগার্ডের সহায়তায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানে প্রচুর পরিমাণে জাল ও পোনা ধরার সরাঞ্জাম জব্দ করেছি। আমাদের কাছে খবর আছে এই পোনা ব্যবসার সাথে কারা জড়িত। খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার নিষোধাজ্ঞা অমান্য করে পোনা সংগ্রহকারী জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে কোস্টগার্ড, চট্টগ্রাম মৎস্য অফিস ও জেল প্রশাসন। অভিযানে প্রায় ৬ হাজার মিটার পোনা সংগ্রহ করার জাল জব্দ করা হয় এবং পাঁচ জেলেকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আক্তার বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সমুদ্রে মৎস্য নিধন রোধ করতে অভিযান পরিচালনা করি। যেহেতু সরকারের বেঁধে দেয়া ৬৫ দিন শেষ হতে এখনো প্রায় ১৫ দিন বাকী। এছাড়া পোনা সংগ্রহ করার কারণে শুধু গলদা চিংড়ির প্রজনন ব্যাহত হয় না, পাশাপাশি অন্যান্য মাছের প্রাকৃতিক প্রজননও ব্যাহত হয়। পোনা ব্যবসার সাথে জড়িত দাঁদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।