রাজুর স্বপ্ন

32

রাজু ও স্বপ্না সারাদিন খড়কুটো কুড়ায়। শীতের সকালটা তাদের কাটে কুড়িয়ে আনা খড়কুটোর আগুনের পাশে। তারা দুজন ভাইবোন, রাজু স্বপ্নার চেয়ে দুই বছরের বড়। তাদের বাবা রমজান মিয়া একজন গাছি। পার্শ্ববর্তী লবনদহ খাল-পাড়ের কিছু খেজুর গাছ কাটেন তিনি। ওগুলো থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করে পার্শ্ববর্তী কৃষকের কাছে অথবা বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন, রমজান মিয়া। রাজু ও স্বপ্না রস পান করতে চায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় রমজান মিয়া তাদের রস পান করতে দেন না। যেহেতু কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধানের চালে তৈরি হচ্ছে বাহারি পিঠা- ভাঁপা, পুলি, পাটিসাপটা, রসের পিঠা ইত্যাদি। রমজান মিয়াকে তাই ইদানীং খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রমজান মিয়া ভোরবেলায় কনকনে শীতের মাঝে খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামিয়ে কৃষকদের ফরমায়েশি রস বিতরণ করেন। প্রতিদিন তিনি কাঁধে ভার চেপে আঁধাছেঁড়া স্যান্ডেল পায়ে কুয়াশাচ্ছন্ন সবুজ ঘাস মাড়িয়ে কৃষকের বাড়ি নিয়ে যান রস। ফরমায়েশি রস বিতরণের পর যদি কিছু রস থেকে যায়, তা তিনি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। রাজু ও স্বপ্নার ভাগ্যে তাই মিষ্টি খেজুরের রস তেমন জুটে না। বাড়ির পাশে নতুন বাজারে গিয়ে রমজান মিয়া সকালের মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে রস বিক্রি করেন। চাদর-লুঙ্গি পরে ও গলায় মাফলার পেচিয়ে গায়ের বয়স্ক লোকেরা প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকা দরে কিনে রোদে দাঁড়িয়ে পান করেন। বিক্রি করার পর যেদিন রস ফেরত আসে, রাজুর মা সেদিন তা দীর্ঘক্ষণ জ্বাল দিয়ে পাটালি বানান। রাজুর বাবা এগুলো কৃষকের কাছে অথবা খানিক দূরে মাওনা বাজরে নিয়ে বিক্রি করেন। করোনার কারণে বন্ধ থাকায় রাজু ও স্বপ্না ইদানীং স্কুলে যাচ্ছে না। টানাপোড়েনের সংসারে থেকে অনলাইনে ক্লাস, ভালো খাবার ও শীতের মোটা কাপড় কোনোকিছুই ঠিকমতো পায় না তারা। রাজুদের দুটি কুঁড়েঘর আছে, এগুলো তালপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি করা । ক’দিন আগেও বৃষ্টির সময় ঘরে টিপটিপ পানি পড়ত। ভিজে যেত আসবাবপত্র। এখন শীত আসায় বৃষ্টির পানিতে ঘরের আসবাবপত্র এবং বিছানা না ভিজলেও যে ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ত, সেগুলো দিয়ে রাতে হিমেল হাওয়া প্রবেশ করে। আঁধাছেঁড়া পুরনো পাতলা কাঁথায় রাতে শরীর গরম হয় না বলে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না তারা।
রাজু তার বোনকে বলে, জানিস স্বপ্না, আমি বড় হয়ে হাজি চাচার মতো একটা তিনতলা বাড়ি বানাব, মোটা মোটা কম্বল কিনব এবং তোকে সাথে নিয়ে চাচার ন্যায় এগুলো ছাদের উপর শুকাতে দেবো। স্বপ্না রাজুর কথা শুনে আনন্দে নাচতে থাকে।