রাজবন ও সুখানন্দ বিহারের কঠিন চীবর দানোৎসবে লাখো পুণ্যার্থী

164

রাঙামাটি রাজবন বিহার : ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাঙামাটির রাজবন বিহারে শেষ হয়েছে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। আন্তর্জাতিকখ্যাত বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহারে আয়োজিত কঠিন চীবর দানোৎসবে প্রায় লাখো পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে। বিহারটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান বৃহস্পতিবার শুরু হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছে। এছাড়াও উৎসবে বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, চরকায় সুতা কেটে চীবর বুনন ও তৈরি, চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা, বুদ্ধমূর্তি দান, অষ্টপরিষ্কার দান, উৎসর্গ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, ধর্মীয় দেশনাসহ ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
কঠিন চীবর দানোৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি রাজবন বিহারের উত্তর মাঠে শুরু হয় শুক্রবার বেলা ২টায়। অনুষ্ঠানের আগে গোটা বিহার এলাকাজুড়ে শোভাযাত্রা সহকারে প্রদর্শন করা হয় হাজার বছরের ঐতিহ্য মহামতি গৌতম বুদ্ধের প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি করা চীবরটি (বৌদ্ধভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র)। এতে অংশ নেন অগণিত পুণ্যার্থী।
২৪ ঘন্টায় তৈরি করা চীবরটি সমবেত পুণ্যার্থীদের পক্ষে মহাপরিনির্বাণ অর্জনকারী মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের উত্তরসূরী ও রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরকে হস্তান্তর করে উৎসর্গ করেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এ সময় রাণী য়েন য়েন রায়, রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মীয় দেশনা দেন। এ সময় শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির, শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবিরসহ শতাধিক বৌদ্ধভিক্ষু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রতি বছর মহামতি গৌতম বুদ্ধের প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাজবন বিহারে আয়োজন করা হয় কঠিন চীবর দানোৎসব।
এদিকে রাজবন বিহার ছাড়াও শুক্রবার জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের আরাঙ্গীমুখ চাকমাপাড়া বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপিত হয়েছে। বিকালে ঘিলাছড়ি পঞ্চকল্যাণ বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত সুমনা জ্যোতি মহাথেরোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় সভায় প্রধান ধর্মালোচক ছিলেন- পোয়াপাড়া শান্তিনিকেতন বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ অদন্ত জ্ঞানানন্দ মহাথেরো। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের রাঙামাটির ট্রাস্টি দীপক বিকাশ চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও নাট্যকার সুশীল প্রসাদ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বৌদ্ধ অ্যাসোসিয়শেনের সভাপতি প্রগতি খীসা উপস্থিত ছিলেন।
সুচিয়া সুখানন্দ বিহার : চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার সুচিয়া সুখানন্দ বিহারে গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব। দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর মর্যাদায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সকাল ৫টায় পবিত্র সুত্ত পাঠ, ৬টায় জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, আর্য্যকীর্তি স্মৃতি তোরণ উদ্বোধন, আর্য্যকীর্তি মহাথের সহ প্রয়াত অধ্যক্ষগণ ও পরপারগত জ্ঞাতিগণ ও সংঘমণিষাদের স্মরণে অষ্টপরিষ্কার সহ সংঘদান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ভদন্ত সোমানন্দ মহাথের, সভাপতিত্ব করেন ভদন্ত শীলরক্ষিত মহাথের, প্রধান জ্ঞাতি ভদন্ত দীপংকর মহাথের, আর্শীবাদক ছিলেন- অধ্যাপক ভদন্ত জ্ঞানরতœ মহাথের, আলোচক ছিলেন ভদন্ত এল অনুরুদ্ধ মহাথের, ভদন্ত শীলরতœ মহাথের, ভদন্ত ধর্মানন্দ মহাথের, ভদন্ত চন্দ্রজ্যোতিঃ থের, ভদন্ত বুদ্ধপাল থের, ভদন্তকে জ্যোতিমিত্র থের ধর্মদানের মধ্য দিয়ে অষ্টপরিষ্কার সহ সংঘদান শেষ হয়, দুপুর ২টায় দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান আরম্ভ হয়। ভদন্ত বুদ্ধানন্দ ভিক্ষু মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বল ও ভদন্ত রূপানন্দ ভিক্ষু’র মঙ্গলাচরণ ও উদ্বোধনী সংগীত মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মায়ানী সুদর্শন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রিয়ানন্দ মহাস্থবির। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন উদয়ন বড়ুয়া। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের প্রফেসর, নন্দনকানন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ভদন্ত ড. জিনবোধি মহাস্থবির।

আশীর্বাদক ছিলেন- ভদন্ত অতুলানন্দ মহাস্থবির, প্রধান ধর্মালোচক ছিলেন শিক্ষাবিদ ভদন্ত শাসনবংশ মহাস্থবির, ধর্মালোচক ছিলেন ভদন্ত মেত্তানন্দ স্থবির, ভদন্ত এইচ. শীলজ্যোতি স্থবির, ভদন্ত ড. সুমনপ্রিয় স্থবির, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ও সংগঠক জে.বি.এস আনন্দবোধি ভিক্ষু। স্বাগত বক্তব্য করেন বাবু পিন্টু বড়ুয়া, বিশেষ অতিথি ছিলেন ৪নং বরকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব, সংগীতা বড়ুয়া, বিপাশা বড়ুয়া প্রমুখ।