রাজনীতিতে পাঁচ বছরেই শীর্ষে নওফেল

90

রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নিলেও পুরোপুরি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর। সেসময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য হয়েছিলেন। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের রাজনৈতিক পদ পাওয়ার সূচনাটা এভাবেই শুরু। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে আরো পাঁচ বছর। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল। এ ৫ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নওফেলের গায়ে কয়েকবার যুক্ত হয় সাফল্যের পালক। গতকাল সর্বশেষ উপমন্ত্রী হয়ে এই মুকুটে যোগ করলেন আরেকটি পালক।
২০১৩ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া রাজনীতির পাঠ এখন যেন পরিপূর্ণতা পেয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এসে ব্যারিস্টার নওফেল হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের উপমন্ত্রী। এর আগে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জীবদ্দশায় বড় ছেলে নওফেলের রাজনৈতিক পদে আসীন হওয়ার সাক্ষী হলেও সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য দেখে যেতে পারেননি ‘চট্টলবীর’ মহিউদ্দিন চৌধুরী। অনেকের মতে, বারবার পিতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ত্যাগ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পুরস্কার জুটছে নওফেলের ভাগ্যে।
মন্ত্রী হওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আস্থা রেখেছেন। আমি অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো। নেত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী যাবতীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাব। আমার পিতা জীবিত থাকলে আজকে খুব খুশি হতেন। আমি মনে করি নেত্রী আমার বাবার প্রতি সবসময় যে আস্থা রাখতেন আজকে আমাকে মূল্যায়নের মাধ্যমে তা আবারো প্রতিষ্ঠিত করলেন।’
জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম পছন্দে থাকছেন ব্যারিস্টার নওফেল। আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত সবখানেই নওফেলের স্থান ছিল বড় চমক। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে ডাক পেয়েছেন। আজ শপথগ্রহণ করবেন তিনি।
জাতীয় নেতাদের কাতারে থাকলেও আঞ্চলিকতার বাইরে যেতে চাননি টানা ১৭ বছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামপ্রেমী এই মানুষটি সরকারের মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যে কারণে আক্ষেপ না থাকলেও মন্ত্রী হওয়ার অপূর্ণতা ছিল রাজনৈতিক এ পরিবারে। এবার নওফেল মন্ত্রী হওয়ায় সেটিও পূরণ হলো। মহিউদ্দিন পুত্র নওফেল উপমন্ত্রী হওয়ায় খুশি চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতারাও।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘নওফেলকে মন্ত্রী করায় আমরা খুশি। এটা চট্টগ্রামবাসীর জন্য আনন্দের খবর। বাকি যারাই মন্ত্রী হচ্ছেন তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। এটা চট্টগ্রামের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আশা করি সরকারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাঁরা চট্টগ্রামের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবেন।’
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা খুবই খুশি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে হিসেবে তো বটেই আমরাও চট্টগ্রামবাসী হিসেবে একজন মন্ত্রী পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী উচ্চশিক্ষিত, রুচিবান, সংস্কৃতিবান, অসাম্প্রদায়িক একজন ব্যক্তিকে মন্ত্রী করেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নওফেল শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। দেশের অশিক্ষা দূর করতে ভূমিকা রাখবেন।’
বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে একমাত্র কোতোয়ালী আসনেই প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় ব্যারিস্টার নওফেলকে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার শুরুতেই সাধারণ মানুষের মনিকৌটায় স্থান করে নেন মহিউদ্দিন পুত্র নওফেল। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নওফেল।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জম্মগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাবা মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েই রাজনীতিতে নামার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী নওফেল লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক পাস ও বার এট ল ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বারের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।