রাজনবাবুর পাতাল বিজয়

49

রাজন প্রতি বছর ক্লাসে প্রথম হয়।
মা-বাবার একমাত্র ছেলে। লেখাপড়ায় ভালো। কোনদিনও পড়তে বলতে হয়না। সকাল সন্ধ্যা ঠিক সময়ে পড়তে বসে। হোম টিচার খুব ভালোবাসে রাজনকে।
একদিন রাজনের মাকে বলে,
-অনেক ছেলে পড়িয়েছি, কেউ অংকে কাঁচা,নয় ইংরেজীতে। বারবার শিখাতে হয়। মাথা গরম হয়,যদি না শিখতে পারে। রাজন কিন্তু তা’ নয়। সবার থেকে আলাদা। সে একদিন অনেক বড় হবে।
– আশির্বাদ করবেন। মা’র ছোট উত্তর।
রাজন দুষ্টু নয়, চঞ্চল ও নয়, শান্ত, নম্র, বিনয়ী। ক্লাসের প্রতিটি স্যার প্রচন্ড ভালোবাসে,স্নেহ করে। তবে সে খেলতে চায় না। কোন খেলা তার পছন্দ নয়। সে শুধু পড়বে। পাঠ বই ছাড়া ও শিশুতোষ গল্প,ছড়ার বই পড়ে।
রাজনের বৃষ্টি ভালো লাগে। বৃষ্টিতে কোলাহল নেই। রাস্তায় ধুলো উড়ে না। দখিনের জানলায় দাঁড়িয়ে মেঘবৃষ্টি দেখা যায়। বৃষ্টিকণা ধরে মনে মনে বলে,
– কি ঠান্ডা,শীতল। আচ্ছা বৃষ্টি কিভাবে হয়? ওরা পড়ে কেন? আকাশে থাকতে পারে না।
তখনই কালো মেঘ গর্জন করে, গুড়ুম গুড়ুম। মেঘের গর্জন রাজনের ভীষণ পছন্দ। সে মেঘের গর্জন ছুঁতে চায়। গুড়ুমগুড়ুম গর্জনকে কাছে ডাকে, আয় আয়। আসে না। মেঘে শুধু ডাকে।
আজ বৃষ্টি থামেনা।
পড়ছে শুধু পড়ছে। সাথে ঠান্ডাও খেলছে। মা মোটা কাপড়ের শার্ট পরিয়ে দেয়। রাজন বলে,
– মা, বৃষ্টি থামছে না কেন?
– থামবে রাজন। বৃষ্টি পড়া শেষ হলে নিশ্চয়ই থামবে।
– মা বৃষ্টি পড়ে কেন?
– আকাশে মেঘ জমলে, যখন মেঘ ধরে রাখতে পারেনা, তখনই বৃষ্টি পড়ে। চল খেয়ে নে। আজ রাত জেগে পড়ার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়।
মায়ের সে অবাধ্য হয়না। খেয়ে বিছানায় শু’তে যায়। রাত বাড়ে। বৃষ্টি পড়ে, ঝুপঝুপ। সাথে মেঘের ছোট-বড় গর্জন। রাজন ঘুমে।
রাজনকে জলদেবতা বলে, পাতালপুরে যাবে? কাঁধে ওঠ।
– যাবো। ওমা, তুমি এত বড়ো কিভাবে কাঁধে উঠব? একটু নীচু হও, তবে তো উঠব। তার আগে বল,
– ওটা কোথায়? ওখানে কি আছে?
– সাগর নীচে। ওখানে রাজপ্রাসাদ আছে, রাজারাণী, রাজকন্যা আছে। খুব সুন্দর। ওরা ভীষণ ভালো।
অনেক সৈন্য আছে। সুন্দর রাজপ্রাসাদ। চোখ জুড়িয়ে যায়। তোমার মন ভরে যাবে।
-আমার সাথে রাজকন্যা কথা বলবে?
-নিশ্চয়ই বলবে। যারা লেখাপড়ায় ভালো ওদের সে বন্ধু হয়।
-সত্যি?
-সত্যি সত্যি সত্যি, তিন সত্যি। চল আর দেরি নয়। এবার কাঁধে ওঠ।
রাজন দেরি করেনা। কৌতূহলে মন ভরে গেছে। পাতালপুরীর রাজকন্যা দেখবে। কি মজা! জলদেবতার কাঁধে চেপে বসে।
রাজন বসার সাথেই জলদেবতা জলে ডুব দেয়।
ধীরে ধীরে জলের গভীরে নামতে শুরু করে জলদবতা। জলদেবতা বলে,
-রাজন ভয় পেয়ো না। আমরা ঠিক সময়ে পাতালপুরী পৌঁছে যাব।
-আমি জলে ভিজে যাবোনা?
-না না ভিজবে না। যারা পাতালপুরীর রাজকন্যাকে দেখতে যায়, ওরা ভিজে না। তা’ছাড়া তুমিতো পাতালপুরী জয় করতে যাচ্ছো। তুমি পাতাল বিজয় পুত্র।
-ও তাই!
ওরা একসময় পাতালপুরীর রাজবাড়িতে পৌঁছে। চারিদিকে সবকিছু সোনার রঙে চিকচিক করছে। বড় গেইট। গেইটে গোঁফে ঢাকা সিপাহী। হাতে তলোয়ার। রাজন জলদেবতার সাথে রাজবাড়ি ঢুকছে। কেউ মানা করেনা। সম্মান করছে সবাই।
অনেক ঘর পেরিয়ে একটি ঝকঝকে সুন্দর ঘরের সামনে দাঁড়ায়। দরজায় দু’জন সিপাই। জলদেবতা বলে,
-রাজকন্যার সাথে রাজনবাবু দেখা করবে।
সিপাই দরজা খুলে দেয়।
দরজা খুলতেই দেখে একটি ঝকঝকে সোনার সিংহাসনে রাজকন্যা বসে। পরনে রাজকীয় পোষাক। মাথায় তাজ। রাজকন্যার পেছনে দ’জন মেয়ে ময়ূরপাখা দিয়ে বাতাস করছে। রাজনকে দেখে রাজকন্যা ডাকে,
-এসো রাজন।
রাজন অবাক। ভাবে,রাজকন্যা আমার নাম জানে? জলদেবতাকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা রাজকন্যা আমার নাম জানলো কি করে?
-আমি বলেছি।
রাজকন্যা আবারও ডাকে,-রাজন এসো। লজ্জা পাচ্ছো কেন? তুমিতো পাতাল বিজয় করতে এসেছো। সবাই এটা পারেনা। এখানে আসা কঠিন। তুমি পেরেছো। তোমাকে ধন্যবাদ।
রাজন পা বাড়ায়। মুখে হাসি।
তখনই মা ডাকে,
– রাজন ওঠ বাবা। কখন সকাল হয়েছে। তুইতো দেরি করিসনা ঘুম থেকে উঠতে। ওঠ বাবা ওঠ।
রাজনের রাগ হয়। বলে, আমি যাচ্ছি পাতালপুরী রাজকন্যার সাথে কথা বলতে। আর মা, তুমি ডাকছো।
রাজনের কপালে মায়ের হাত। মা আবারও ডাকে ওঠ রাজন।
রাজন বলে, মা বিরক্ত করোনা। আমি এখন পাতালপুরী রাজকন্যার সামনে। ওর সঙ্গে কথা বলবো।
মা হাঃ হাঃ শব্দ করে হাসে। প্রচন্ড হাসির শব্দে রাজন চোখ খোলে। জানলার পর্দার ফাঁকে সূর্যের আলো রাজনের চোখে ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে মায়ের মুখ। মা হাসছে। রাজন বলে, মা আমি কোথায়?
-বিছানায়।
-আমিতো এতক্ষণ পাতালপুরীর রাজকন্যার সামনে ছিলাম।
-না বাবা তুই স্বপ্ন দেখছিলি।
রাজন মায়ের কথা শুনে মনে মনে বলে,
ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা!