রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করার জোর প্রস্তুতি

30

আমন চাষাবাদের ভরা মৌসুমে চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত গোমাই বিলে আমন চাষাবাদের উপযোগি করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বোরো চাষের ফসল ঘরে তোলার পর কৃষকরা আবারো আমন চাষ করার জন্য জমি তৈরিতে ব্যাস্ত সময পার করছেন। বোরো চাষাবাদেও ফসল ঘরে তোলার পর গুমাই বিল ২৭/২৮ দিন সম্পূর্ণ ন্যাডা ভূমিতে পরিণত ছিল। গুমাই বিল ছিল সম্পুর্ণ বিশ্রামে। এখন সে জমিতে ধান গাছের আগাছা জমে আছে। সাথে বৃষ্টির পানিতে জমি এখন চাষ উপযোগি। আমন চাষে পানির প্রয়োজন হয়না। বর্ষার বৃষ্টির পানিতে সম্পূর্ণ চাষাবাদ হয়। এবারে গুমাই বিলসহ রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হবে জানালেন উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকতা মো. শহীদুজ্জামান। গতবারের বোরো চাষ বাম্পা ফলন হযেছে। কৃষকরা ধানের দাম পেয়েছে আশানূরুপ। তাদের মাঝে চাষাবাদে ব্যাপক উঃসাহ দেখা দিয়েছে। যারা গত ২/৩ বছরে কৃষি চাষ থেকে দূরে সরে গেছে এবারের ধানের ভাল দাম পাওয়ায় আবারও তারা কৃষি কাজে ফেরৎ এসেছে। এবারে রাঙ্গুনিয়ায় একাধিক বিল অনাবাদি না থাকার আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা এক ইঞ্চি জমিও কালি রাখা যাবেনা। সে কারণে কৃষকরাও কোমর বেধে জমিতে চাষ করার কাজে জমি তৈরি করছে। গুমাই বিল থেকে দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। সে হিসেবে গুমাই বিলের চাষাবাদ অনেক গুরুর্ত্ব রয়েছে। কৃষক এর হাতে এখন আর অভাব নেই। নেই অর্থের সংকট। সরকারের সার বীজ, না প্রনোদানা এবং মূল্যবান কৃষি যন্ত্র কৃষক এর মাঝে বিনা মুল্যে বিতরণ করায় কৃষককের আর নানা মুখি সংকটে পড়তে হচ্ছেনা। ধান কাটা থেকে বীজ রোপনের নানা আধুনিক যন্ত্রপাতে এখন কৃষক এর চাষ অনেক সহজ। প্রাকতিক দূর্যোগ না থাকলে কৃষক অল্প পূজিতে চাষাবাদ করে অর্থনেতিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। জানা যায়, জুলাই মাসের শেষের দিকে গুমাই বিলে বন্যা হওয়ার আশংকায় থাকে। সে আশংকায় কৃষকরা চাষাবাদের চরম অনিশ্চয়তার মাঝে পড়ে। ভারি বৃষ্টিপাত কাপ্তাই বাধের পানি ছেড়ে দিলে রাঙ্গুনিয়ায় নিচু এলাকা হওয়ায় বন্যা দেখা দেয়। এতে গুমাই বিলে চাষাবাদ পানির নিচে থাকে। গতবার আমন চাষে বন্যা হয়নি। প্রকৃতি কৃষকের অনূকুলে ছিল। বীজতলা তৈরী প্রায় শেষ। এখন জমি রোপনের উপযোগি করেছে। বৃষ্টিতে জমি এখন পুরোপুরি চাষাবাদ উপযোগি। আমন চাষাবাদে সেচের প্রয়োজন পড়েনা। প্রকৃতির বৃষ্টিতে পুরো মৌসুমের চাষাবাদের পানির প্রয়োজন পড়েনা। থেমে থেমে বৃষ্টি আর মুসুল ধারায় বৃষ্টি কৃষকের মনে আমন চাষে এবারে আশা জাগিয়েছে যথা সময়ে চাষাবাদ সম্পন্ন করা যাবে বলে। মনের নির্মল আনন্দে গুমাই বিলে আমন চাষাবাদের সবুজ চারা রোপনে চলছে কৃষকের জোর প্রতিযোগিতা। আগামি ১৫/২০ দিনের মধ্যে পুরো গুমাই বিল আমন চাষা¦াদের সবুজ চারায় ছেয়ে যাবে। রাঙ্গুনিয়া কৃষি সমপ্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, এবারে রাঙ্গুনিয়ায় আমন চাষাবাদের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে, ১৫ হাজার হেক্টর। এবারে কৃষকরা বেশী ফলনের জন্য বি ধানÑ৭৫ জাতের ধান চাষাবাদ করছে। জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সারের পরিবর্তে কচুরিপনা, শ্যাওলা পচিয়ে তৈরি করা হয় সবুজ সার। এছাড়াও ছাই, গোবর ব্যবহার করা হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহীদুজ্জামান জানান, এবারের আমন মৌসুমে কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে বিভিন্ন জাতের উপজেলার নানা স্থানে ২শ হেক্টরের প্রর্দশনী চাষাবাদ করা হবে। নতুন জাতের চারা বি ধান ৭৫ এর প্রতি কুষকরা আগ্রহ দেখিয়েছে বেশী। তারা এবারের আমন চাষাবাদে বি ধান ৭৫ বেশী করে লাগাবে। এ জাতের ধানে উচ্চ ফলন হয় বেশী। নতুন কওে আউশ ধানের চাষ করা হবে। এ বিষয়ে কৃষককে উপজেলা কৃষি অফিসের তত্বাবধানে কৃষকের মাঝে কৃষক মাঠ দিবস নানা ভাবে উদবুদ্ধ করা হযেছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা কাজী রমিজ উদ্দিন বলেন, এবারে আমন চাষাবাদ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর সভার অনাবাদি থাকবেনা কোন জমি। সারের পযার্প্ত মজুদ রয়েছে ডিলারের কাছে। রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউসিয়নের পাটান পাড়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ নুরুল হক জানান, গুমাই বিলের চলছে আমন চাষাবাদে চারা রোপনের জন্য নানা প্রস্তুতি। পানির সমস্যা নেই। সার ও বীজের সমস্যাও নেই। সব মিলে পুরো রাঙ্গুনিয়া এবারে আমন চাষাবাদে ভরে যাবে। নতুন জাতের বি ধান ৭৫ লাগাচ্ছি। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় আমন চাষাবাদ যথাযথ হচ্ছে। নতুন বীজ আউশ ধানেরও চাষ করা হবে। হোছনাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের কৃষক নবী সওদাগর, জানান, সময় অনুযায়ী সার, বীজ পাওয়ার নিশ্চয়তায় জমির বীজ তলা তৈরি থেকে শুর করে আমন চাষাবাদে কোন সমস্যা হচ্ছেনা। চাষাবাদের শ্রমিকের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকলে আমরা চাষাবাদে ব্যাপক লাভবান হব। রাঙ্গুনিয়া কৃষি অফিসের মাঠ কর্মকর্তাদের সার্বিক তত্বাবধানে আমন চাষাবাদের কর্মকান্ড চলছে। রাঙ্গুনিয়া গুমাইবিল, নলুয়া বিল, জুটমিল বিল, পদুয়া বিল, উত্তর রাঙ্গুনিয়ার হোছনাবাদ বিল দক্ষিন রাঙ্গুনিয়াসহ নানা বিলে চলছে আমন চাষাবাদের কার্যক্রম। রাঙ্গুনিয়া কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, আমন চাষাবাদের লক্ষ মাত্রা নিয়ে আমরা কাজ করছি। নতুন ধানের বীজ কৃষকরা লাগাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে গত বারের মত আমন চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে। আশাকরি কোন জমি অনাবাদি থাকবেনা। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি। সার বীজের কোন সমস্যা নেই। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, আমন চাষাবাদে কৃষকদের সার্বিক সহযোহিতার মার্ধ্যমে আশাকরি এবারের চাষাবাদে কোন সমস্যা হবেনা। সব ঠিক থাকলে আমন চাষাবাদে বাম্পার ফলন হবে।