রাঙ্গুনিয়ায় সেবা দিতে জনগণের দ্বারেই আসছে পুলিশ

27

সেবা দিতে পুলিশের দ্বারে জনগণ নয়, জনগণের দ্বারেই আসছে পুলিশ। রাঙ্গুনিয়ায় গ্রাম পর্যায়ে পুলিশের সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে ওসি এখন আপনার পাশে শীর্ষক ব্যতিক্রমী এই সেবা কার্যক্রম চালু করেছে ওসি মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম। এর আওতায় গত ১৯ ফেব্রূয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের রাণীরহাট বাজারে এ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাণীরহাট বাজারের মাঠে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আছে পুলিশ। মানুষের অভিযোগ শুনছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। অভিযোগ লিখছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজেই। পাশে সহযোগী হিসেবে ল্যাপটপে লিখিত আকারে ডায়েরি ও অভিযোগ লিখছেন আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিতে মাইকে ডাকছেন এক পুলিশ সদস্য। এভাবে এলাকায় এলাকায় গিয়ে বুথ খুলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকেন বসে। বলেন জঙ্গিবাদের কুফলের কথা শোনেন মাদক, ইভটিজিংসহ নানা সমস্যার কথা। ওই স্পটে বসেই লিখিত আকারে অভিযোগ ও মামলা নিচ্ছেন। কিছু সমস্যার সমাধান স্পটেই করে দেন। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর ব্যবস্থা করেন। এরআগে গত সপ্তাহে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট বাজারেও এই ধরণের কার্যক্রম চালানো হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, কার্যক্রমটি লোক দেখানো নয়। থানায় যেতে অনেকেই দালাল ধরেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষের থানায় যেতে কষ্ট হয়। তাই তাদের এ কার্যক্রম। কার্যক্রমটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রতি সপ্তাহে চালানো হবে। ওসি এখন আপনার পাশে কার্যক্রমের আগেই সেবা নিতে পুরো এলাকায় মাইকিং করা হয়। পুলিশের সেবার কথা শুনে মোহাম্মদ নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তি জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ফজল করিম ও মো. হাছান নামে দুই ব্যক্তি হারানো ডায়েরি করেন। ডায়েরি নেওয়ার পর তাঁদের প্রাপ্তি স্বীকার কাগজ দেওয়া হয়। এমন সেবা পেয়ে তাঁরা খুশি। এদিন তিনটি সাধারণ ডায়েরিসহ ছয়টি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান দায়িত্বে থাকা থানার উপপরিদর্শক ইসমাঈল হোসেন জুয়েল। তিনি বলেন, মাদক, ইভটিজিং, ছিনতাইসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে নোট করা হয়েছে। কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন থানার তিনজন উপপরিদর্শকসহ ১২ জন পুলিশ সদস্য। এ সময় পুলিশের এই কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন, ব্যবসায়ী নেতা কামাল উদ্দিন চৌধুরী, ইউসুফ মাতব্বর, হাছান তালুকদার, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইউপি সদস্য রোস্তম আলী, আবু তৈয়ব, বদিউল আলম, আশরাফ আলী খান প্রমুখ।অভিযোগ দিতে আসা রাজানগর ইউনিয়নের আবু জাফর বলেন, থানায় যেতে মানুষের যে ভয় কাজ করত, এ উদ্যোগের কারণে তা দূর হয়ে যাবে। ভয় না করে ওসির সঙ্গে এভাবে সরাসরি কথা বলার পর মনে শান্তি পাচ্ছে এলাকার মানুষ। মৌখিক অভিযোগ করে ইউসুফ মাতব্বর বলেন, রাজানগরের একটি কলোনীতে মাদকের আধিক্যতা দিন দিন বাড়ছে। হাছান তালুকদার নামে অন্য একজন বলেন, চুরির বিষয়ে এক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমি নিজে আদালতে স্বাক্ষি দিয়েছি। এরপরও সে জামিনে বের হয়ে আবারও ৫/৬টা দোকান চুরি করেছে। তাই এদের আইনের আওতায় আনা গেলে চুরি ডাকাতি রোধ করা যাবে। কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রায়ই ইটভাটায় হানা দেয়, চাঁদা দাবি করে একটি সিন্ডিকেট। এছাড়া মাদকের আকড়া রাণীরহাটের কলোনীতে। মাগরিবের পড়ে সাদা সার্ট পড়া কিছু মানুষ নিয়মিত এই কলোনীতে যায়। মূলত তাদের হাত ধরে ওই স্থানে মাদক বেচাকিনা চলে। তাই আগে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার ও ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন বলেন, সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই আদালতের জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। তাই তাদের গ্রেপ্তারের পর থানাতেই দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। রাজানগর ও ইসলামপুরে কোন অপরাধীদের থাকতে দেওয়া হবে না। আগে সন্ত্রাসের জনপদ ছিল এতদ অঞ্চন। এখন তা কমেছে। তবে যারা এখনো এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, কিংবা এলাকায় মাদক ছড়াচ্ছে তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে, না হয়ে ভাল হয়ে যেতে হবে। সাধারণ মানুষের এসব মৌখিক অভিযোগ নোট করা হয়েছে জানিয়ে অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।