রাঙ্গুনিয়ায় শিশু নিখোঁজ নিয়ে ফেসবুকে গুজব

80

রাঙ্গুনিয়ায় খুকি আক্তার (১১) নামে এক শিশু নিখোঁজ ডায়রীকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। দাদীর সাথে রাগারাগি করে শিশুটি স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। কিন্তু আর ঘরে ফিরে না আসায় এই গুজবের সূত্রপাত ঘটে।
সূত্র জানায়, গত ৭ জুলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে রাঙ্গুনিয়ার ৮ জন শিশু অপহরণের একটি ক্ষুদে বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। একজন আরেকজনকে বার্তাটি ছড়িয়ে দিলে বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এরমধ্যে খুকি আক্তার নামে একটি শিশু নিখোঁজ হলে গুজব সৃষ্টিকারীরা তার ছবি এবং নিখোঁজের ডায়রী কপি দিয়ে নতুনভাবে তৎপরতা শুরু করে। তবে শিশু অপহরণের বিষয়টি গুজব বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে এই ধরণের গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই গুজব সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সূত্র আরও জানায়, গত ৭ জুলাই উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের গুণগুনিয়া বেতাগী এলাকার প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে খুকি আক্তার (১১) সকালে স্কুলের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। স্কুলের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সে বাড়ি না ফিরায় স্বজনরা স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখেন সে স্কুলেই যায়নি। এরপর সম্ভাব্য সকল স্থানেও তাকে না পাওয়ায় থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী করেন স্বজনরা। পরে তার ছবি এবং নিখোঁজ ডায়রীর ছবি ফেসবুকে দিয়ে স্বজনরা মেয়েটির সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেন। পরবর্তীতে খুকির স্বজনদের দেওয়া পোস্টটিই কপি করে ফেসবুকে ৮ জন শিশু অপহরণের বিষয়টিকে সত্য বলে প্রচার শুরু করেন।
খুকি আক্তারের পরিবার সূত্র জানায়, গত ৫ বছর আগে খুকির বাবা-মা দুজনের মধ্যে তালাক হয়। এরপর থেকে সে তার দাদীর কাছেই বড় হচ্ছিল। সে বর্তমানে পোমরা এসআরএস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ৭ জুলাই স্কুলে যাওয়ার সময় দাদীর সাথে তার রাগারাগি হয়। এই ঘটনায় মেয়েটি অভিমান করে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে চলে যায় পশ্চিম বেতাগী এলাকার খালার বাসায় এবং সেখান থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় তার নিজের মায়ের কাছে।
এই বিষয়ে খুকির দাদী ছখিনা বেগম বলেন, আমরা খুকিকে কেউ অপহরণ করেছে মনে করে থানায় নিখোঁজ ডায়রী করেছিলাম। নিখোঁজের একদিন পর ৯ জুলাই খবর পায় খুকি তার মায়ের কাছেই চলে গেছে।
এদিকে খুকি নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে পাওয়া গেলেও এখনো ফেসবুকে ঘুরছে সে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি। এরআগে গত ৭ জুলাই উপজেলার সরফভাটা, হোছনাবাদ, পারুয়া ও লালানগর ইউনিয়ন থেকে ৮ জন শিশু অপহরণের কথা ফেসবুক ম্যাসাঞ্জারে ক্ষুদে বার্তায় ছড়িয়ে পড়ে। এরসাথে খুকির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জুড়িয়ে দিয়ে অনেকে এটিকে সত্য বলেও প্রচার শুরু করে।
রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত দুইদিনে রাঙ্গুনিয়া থেকে কোনো নিখোঁজ কিংবা অপহরণের খবর পাইনি। খুকির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি ছাড়া থানায় আর কোনো নিখোঁজ কিংবা অপহরণের ডায়রি হয়নি। খুকিতো অপহরণ হয়নি। সে তার দাদীর সাথে রাগারাগি করে মায়ের কাছে চলে গেছে। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ বা নিখোঁজের বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব বলে জানান তিনি।
এই ব্যাপারে উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক ইসকান্দর মিয়া তালুকদার বলেন, শিশু নিখোঁজ হওয়ার গুজবটি উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে। ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে এই নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গুজব সৃষ্টিকারীরা একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাই জনস্বার্থে এদের চিহ্নিত করা দরকার।