রাঙ্গুনিয়ায় মাছ ব্যবসায় স্বাবলম্বী নারী পুরুষ

174

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়াম নগর চৌমহনীতে বিশাল মাছের আড়ত ব্যবসায় উপজেলায় অর্থনেতির চাকা সচল রাখছেন। ভোর ৫টায় মরিয়াম নগর চৌমহনী এলাকার মাছের আড়তের সামনের দৃশ্য যে কাউকে অবাক করবে। কাক ডাকা ভোরে মাছের আড়তে কাপ্তাই সড়কে শত নারী পুরুষের ভীড় অনেকটা জনসভার মত। সাথে নানা জাতের মাছের টুকরী। পাইকারীভাবে মাছ বিক্রির বিশাল কর্ম যজ্ঞ চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত। এরিমধ্যে ট্রাকে ট্রাকে মাছের আড়তে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে রাত ২টা থেকে ৪টা মধ্যে নানা জাতের মাছ আড়তে ব্যবসায়ীদের কাছে চলে আসে। আর এখান থেকে পুরো রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাশাপাশি পার্ব্যত্য চট্টগ্রামের নানা উপজেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় ভোরে ট্রাকে করে পাইকারী ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদামত নানা জাতের মাছ নিয়ে যায়। এ মাছের আড়ত থেকে কমপক্ষে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ মাছ ব্যবসায়ী পাইকারীভাবে বিক্রির জন্য মাছ নিয়ে যায়। এছাড়াও খুচরাভাবে উপজেলার ঘরে ঘরে গিয়ে মাছ বিক্রি করে এসব পুরুষ ও মহিলারা গড়ে ২শ থেকে ৩শ জন মাছ নিয়ে যায় এ আড়ত থেকে। গড়ে প্রতিদিন এ আড়ত থেকে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। এতে করে উপজেলার মাছ ব্যবসায় ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখছে এ মাছের আড়ত। এ আড়ত খেকে মাছ ব্যবসা করে এলাকার শত নারী পুরুষ বেকার মুক্ত হয়েছেন। দরিদ্রতা থেকে অর্থনেতিক ভাবে সফলতা পেয়েছেন। জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার মরিয়াম নগর চৌমহনী মাছের আড়তে খুলনা সাতক্ষিরা কুমিল্লা থেকে নানা জাতের মাছ এ আড়তে প্রতিদিন ট্রাক যোগে আসে। সামুদ্রিক মাছ চট্টগ্রাম ক্লোড স্টোর থেকে আসে। এখানে সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়। মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন ১শ টন মাছ এখানে বিক্রি হয়ে থাকে। এখানে ৩০ থেকে ৪০ জন মাছের আড়ত ব্যবসার সাথে জড়িত। মেসার্স খাজা বাবা ফিশিং এর মালিক মোহাম্মদ গিয়াশ উদ্দিন জানান, আমাদের আড়ত থেকে নানা প্রজাতের মাছ পাইকারী ও খুচরো ভাবে প্রতিদিন নিয়ে যায়। ভোর হওয়ার আগে এখানে পাইকারী ব্যবসায়ীরা চলে আসে। মাছ বিক্রির পাশাপাশি এখানে বেকার যুবক ও মহিলারা বছরে পর বছর মাছ বিক্রি করে স্বাবরম্বী হয়েছেন। মাছের যে চাহিদা আছে সেটা এখানকার আড়ত মিটাতে পারছে। মাছের জন্য কোথাও যেতে হয়না। চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান মাছ বাজারের ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন জানান, আমরা প্রতিদিন মরিয়াম নগর চৌমহনী মাছের আড়ত থেকে নানা জাতের মাছ এনে বিক্রি করছি। এ মাছের আড়ত না হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে মাছ আনতে হতো। সে সময় মাছের দাম চড়া মুল্যে বিক্রি করতে হতো। মরিয়ামনগর চৌমুহনী মাছের আড়তদার ও নয়নমনি ফিসারির মালিক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, আমাদের আড়ত থেকে প্রতিদিন রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর সভার বিভিন্ন স্থানে ১শ থেকে দেড়শ পুরুষ মহিলারা পাইকারীভাবে মাছ কিনে বিক্রির জন্য নানা স্থানে নিয়ে যায়। এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমাদের আড়তে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন নিয়ে আসা হয়। এখানে দিন দিন মাছের আড়তের সংখ্যাও বাড়ছে। রাঙ্গনিয়ার মরিয়াম নগর চৌমহনী জেলে পাড়ার মহিলা মাছ বিক্রেতাকারী জুনু দাশ ( ৩৪) জানান, স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ৩ সন্তান নিয়ে দুই বছর অনাহারে অনেক দিন কোন ভাবে দিন কাটিয়েছি। একবেলা খেয়ে না খেয়ে অভাবের টানাটনির সংসারে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছিলাম। ছেলে ও মেয়ের লেখা পড়া বন্ধ রাখতে হয়েছে। গ্রামের পাশের বাড়ীর তাও স্বামী পরিত্যক্তা পিংকি দাশের সহযোগিতায় মাছের টুকরি নিয়ে মাছের আড়তে যায়। প্রথমে ১০ থেকে ১২ কেজি মাছ নগদ কিনে এনে বিক্রি করি। এর পর ক্রমশ মাছের ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি। এখন প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টায় এক দেড় মন মাছ বিক্রি করি। গত এক বছরে মাছ বিক্রি করে নিজেকে স্বামীর অভাব মুছতে পেরেছি। পেয়েছি অর্থনৈতিক মুক্তি। ছেলে মেয়েদের বন্ধ লেখা পড়া আবার চালু করেছি। সমাজে নিজের একটা অবস্থান সৃষ্টি করেছি। সমাজ ও পরিবারের অবহেলা থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমাদের দেখায় আমাদের জেলে পাড়ায় এখন ২০ থেকে ২২ জনে মাছ ব্যবসা করে সংসারের আয়ের পথ হিসেবে মাছ ব্যবসা করছে। এদের বেকার জীবন এখন অনেকটা মুক্ত। চন্দ্রঘোনা কদমদলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর জনান, চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নে জেলে পাড়ার অধিকাংশ পরিবার মাছ ব্যবসা করে জীবন যাপন করছে। মরিয়াম নগর চৌমহনী মাছের আড়ত থেকে এসব মাছ ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন মাছ কিনে এনে গ্রামে বিক্রি করে আসছে।
সমাজের অসহায় নারী পুরুষ স্বল্প পূজিতে সহজ ব্যবসা হিসেবে মাছ ব্যবসাকে বেছে নিয়েছে। গ্রামীন অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে জানান, উপজেলা পর্যায়ে বিশাল মাছের আড়ত ব্যবসা দীর্ঘদনি চলে আনছে। এলাকায় মাছের চাহিদা মিটিয়ে ব্যবসায়ীক ভাবে মাছ ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ভাবে অবদান রাখছে। সাথে দিন দিন মাছের চাহিদা বাড়ছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, রাঙ্গনিয়া উপজেলার মাছের আড়ত ব্যবসায় অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। সাথে বেকারদের কর্মসংস্থান হয়েছে।