রাঙ্গুনিয়ায় গৃহবধূ নির্যাতন

44

রাঙ্গুনিয়ায় এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার শিলক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বহদ্দার পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত গৃহবধূর নাম শানু আকতার (২৫)। সে উপজেলার পূর্ব সরফভাটা মায়ার বাপের বাড়ির মো. কাদের বক্সের মেয়ে এবং শিলক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বহদ্দার পাড়া এলাকার শাহ আলমের পুত্র মো. ফোরকানের স্ত্রী। এ ঘটনায় তার মা জাহানারা বেগমের (৫২) করা একটি মামলায় শ্বাশুড়ি ও দুই ননদিনীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, গৃহবধূর শ্বাশুড়ি জান্নাতুল ফেরদৌস (৫০), ননদিনী খালেদা বেগম (২৫) ও রুমি আকতার (২৩)। মামলায় অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- শ্বশুর শাহ আলম (৫৫) ও ননদিনী ফারজানা আহমদ ময়না (২৩)। পুলিশ এ দুইজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান। সূত্রে জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর শানু তার বাপের বাড়ি বেড়াতে এসে ১০ অক্টোবর শ্বশুর বাড়িতে ফিরে গেলে শ্বশুর শাশুড়ি ও ননদিরা তাকে বাসায় ঢুকতে দেয়না। কারণ জানতে চাইলে শ্বশুর শাহ আলম বলেন, তোমাকে আমার ছেলে তালাক দিয়েছে। তুমি এ বাড়িতে আর ঢুকতে পারবেনা। এসব কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শানেিক বসত ঘরে আটকে রেখে কোন কিছু খেতে না দিয়ে একদিন ধরে নির্যাতন চালায়। গত ১১ অক্টোবর দিকে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রশি দিয়ে হাত-পা বেদম মারধর করে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও ননদিরা। পরে প্রতিবেশীরা শানুর পরিবারকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে উদ্ধার করে। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় রাগুনিয়া থানায় মামলা দায়ের পর ১২ অক্টোবর শ্বাশুড়ি ও দুই ননদিনীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানার এস আই মজিবুর রহমান জানান, থানায় মামলা দায়েরের পর শ্বাশুড়ি দুই ননদিনীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় অপর আসামিরা পালিয়ে য়ায়। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। মামলার বাদী ও গৃহবধূর মা জাহানারা বেগম জানান, ২০১৪ সালে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে আমার মেয়ের সাথে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয় প্রবাসী মো. ফোরকানের। তাদের সংসারে বর্তমানে ১৮ মাস বয়সের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবীতে আমার মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালাতো। কিন্তু বাচ্চা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করতো সে। সর্বশেষ তার স্বামী পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে আমার মেয়েকে তালাক দেয়ার পায়তারা চালায় এবং হত্যা করে চিরতরে সরিয়ে দিতে তাকে এভাবে মারধর করে। গৃহবধূ শানু আকতার জানান, গত দুই বছর আগে আমার স্বামীর সঙ্গে পাশের বাড়ির এক মেয়ের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর আমি তার প্রতিবাদ করি। এতে আমার ওপর আমার স্বামী নির্যাতন শুরু করে। এরই মধ্যে স্বামী বিদেশে চলে গেলেও সেখান থেকে তার নির্দেশে দুই বছর যাবৎ শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদিরা চলায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। আমার মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সবকিছুই মুখ বুঝে সহ্য করতাম। প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা যুবলীগ নেতা হাসান মুরাদ জানান, আমাকে তার মা খবর দেওয়ার পর পুলিশের সহায়তায় শ্বশুরবাড়ির একটি কক্ষ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করি। এসময় তার শারীরিক অবস্থা খুব নাজুক ছিল। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। সভ্য এ সমাজে মধ্যযুগীয় কায়দায় এই অমানুষিক নির্যাতনের যদি সুষ্ঠু বিচার না হয়, তবে এ ঘটনা বার বার ঘটতে থাকবে। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে আর কোন শানুকে যেন এভাবে নির্যাতনের শিকার হতে না হয় তার ব্যবস্থা করা হোক।