রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ক্লাশ চলছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে

68

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ক্লাশ চলছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা। আগামী জানুয়ারিতে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম ব্যাচের ক্লাশ চালু হবে। যারা বিগত ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ২০১৪-১৫ সেশনে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল তারা ৪ বছর পেরিয়ে সমাপণী দিয়ে এমবিবিএস ইন্টারনি করার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা তারা স্থায়ী ক্যাম্পাস দেখতে পাবে কিনা। নাকি অস্থায়ী ক্যাম্পাস থেকেই এমবিবিএস শেষ করে তাদের বিদায় নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ। এদিকে মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সরকার শহরের জেলা পরিষদ মিনি চিড়িয়াখানা সংলগ্ন হ্যাচারি এলাকায় ২৫ একর জমি অধিগ্রহন করে। অধিগ্রহনকৃত ভূমির মালিকদেরও জেলা প্রশাসক কর্তৃক ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হয়েছে। যতটুকু জানতে পারলাম এ জমির উপর আর কারো কতৃত্ব নেই। জমির মালিক মেডিকেল কলেজ। আর এ ২৫ একর জমির উপর হবে নির্মিত হবে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ভবন। মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজের ভূমি সার্ভে হয়ে গেছে অনেক আগে। গণপূর্ত বিভাগ ভবনের নকশা তৈরি করে স্থাপত্ব অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন। নকশার অনুমোদন হয়ে গেলে ডিপিডি অর্থ ছাড়ের জন্য প্রকল্পটি একনেকে পাঠাবেন। যেহেতু ডিপিডিতে অর্থ জমা আছে সে ক্ষেত্রে অনুমোদনের জন্য দেরি হবে না। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. টিপু সুলতান জানান, চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ১৬টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে সরকারি ৫টি যথা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ। বাকি ১১টি মেডিকেল কলেজ বেসরকারি। এ ১৬ মেডিকেল কলেজের মধ্যে দ্বিতীয় এমবিবিএস পেশাগত পরীক্ষায় রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ সুলতান ভূঁইয়া তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এছাড়াও এমবিবিএস তৃতীয় পেশাগত পরীক্ষায় ১৬ মেডিকেল কলেজের মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন মানিয়া আক্তার। চট্টগ্রাম বিভাগে যে ৫টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে এর মধ্যে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান অনেক ভাল। যদিও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ এখনো রয়ে গেছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। বর্তমানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী। আগামী জানুয়ারি মাসে পঞ্চম ব্যাচের ক্লাশ শুরু হবে। তাই হিমশিম ক্ষেতে হবে এসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে। যদি নিজস্ব ক্যাম্পাস হতো তা হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। বর্তমানে মেডিকেল কলেজে ৫১জন শিক্ষক রয়েছে। তারা নিয়মিত ভাবে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে সদর হাসপাতাল ২৫০ বেডে উন্নতি হওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও কেন যে কাজ শুরু হচ্ছে তা বুঝতে পারলাম না। যদি সদর হাসপাতাল ২৫০ বেডের হয়ে যেত তা হলেও মেডিকেল কলেজের ভবন সমস্যা একটু লাগাব হতো। অধ্যক্ষ আরো বলেন, ডিপিডি পাশ হলে সেটি গণপূর্ত বিভাগে যাবে সেটি তারা নকশা তৈরী পাঠালে সে অনুপাতে টেন্ডার হওয়ার কথা। জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানান, মেডিকেল কলেজের ভূমি অধিগ্রহনের টাকা দেওয়া হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ২৫ একর জমি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^ বিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শেষ হয়েছে। বিশ^ বিদ্যালয়ের ভিসিকে জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডা. শহীদ তালুকদার বলেন, মেডিকেল কলেজের ভবন তৈরীর নকশা গণপূর্ত বিভাগ তৈরী শুরু করছে জনবলের অভাবে একটু দেরি হচ্ছে। তবে ২০১৯ সালের মধ্যে নকশার কাজ শেষ হবে। নকশার কাজ শেষ হলে ভবন তৈরীর কাজ শুরু হবে। উল্লেখ্য, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^ বিদ্যালয় স্থাপনকে কেন্দ্র করে বিগত ১০ জানুয়ারি ২০১৫ সালে সকাল ১১টায় পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা বাঁধে এতে জেলার নানিয়ারচর উপজেলার নিরিহ শ্রমিক মনির হোসেন কাজে যাওয়ার সময় উপজাতি সম্প্রদায়ের হাতে নির্মম ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে। আজও সঠিক বিচার পাননি মনিরের পরিবার। স্থানীয় লোকজন বলেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপনকে কেন্দ্র করে রক্ত ঝড়লো এবং আন্দোলন করলো বাঙালিরা আর সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন উপজাতিরা। অপর দিকে এখানকার স্থানীয়দের দাবি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ও নিয়োগের ব্যাপারে যেন তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের সর্বত্র অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়।