রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি পর্যটকসহ যাত্রীরা

34

রাঙামাটির জেলার যাত্রী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকরা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবহেলার কাছে যুগযুগ ধরে জিম্মি হয়ে রয়েছে। যোগাযোগের এই দন্যদশার কারণে পর্যটন শিল্প দিন দিন ঝিমিয়ে পড়ছে। রহস্যজনক কারণে ঘুম ভাঙছে না সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। বাড়ছে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা। সাপের মতো আঁকা-বাঁকা পাহাড়িপথে সঠিক সময় ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌছার জন্য ভাগ্যের উপরই ভরসা রেখে যাতায়াত করতে হয় এ সড়কের যাত্রীদের। চট্টগ্রামের অক্সিজেনে মুড়ির টিনের মতো তিন বর্গফুটের একটি টিকেট কাউন্টার থাকলেও নেই যাত্রীদের বসার স্থান। প্রশাসন একাধিকবার উদ্যোগ নেয়ার দাবি করলেও তাদের কাজে দায়সারাভাবই প্রকাশ পেয়েছে। যে কারনে যুগের পর যুগ ফিটনেস বিহীন ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি দিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করছে চট্টগ্রামের রাউজান থানার কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট এমন ভয়ঙ্কর তথ্য জানিয়েছে একাধিক সুত্র। সিন্ডিকেট ভুক্ত পাহাড়িকা ও দ্রুতযান নামের ২টি বাস সার্ভিস টিকিয়ে রাখতে এ সড়কে অন্য কোন বিলাসবহুল বাস সার্ভিসের প্রবেশ নিষেধ। রাউজান সিন্ডিকেটের এই অলিখিত নিষেধাজ্ঞা যুগের পর যুগ ধরে মানতে বাধ্য হচ্ছে রাঙামাটি জেলাবাসী এবং যাত্রী সেবার সাথে জড়িতরা। কারণ তাদের হুকুমই আইন। তাদের হুকুম না মেনে এ সড়কে কোন ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ী নামালে, সেটিকে গায়েব কিংবা ভাংচুরের কবলে পড়া যেন অনিবার্য। তিক্ত-বিরক্ত রাঙামাটির কয়েকজন সমিতি তৈরী করে এই সড়কে কর্ণফুলী পরিবহন নামে দু’টি বিলাসী চেয়ার কোচ নামায়। কিছুদিন পর সেখান থেকে একটি গাড়ী রাতারাতি গায়েব হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে অপর গাড়ীটি চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মালিক সমিতির জিম্মায় দিয়ে দেয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যাত্রী হয়রানী ও দূরব্যবহার যেন এ সড়কের নিত্যদিনেরই ঘটনা। আবার কোন গাড়ী সিন্ডিকেভুক্ত করতে চাইলেও মোটা অংক গুনতে হয়। প্রতিদিনের চাঁদা এই হিসেবের বাইরে বিষয়। গাড়ী গুলো কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চালাতে অক্ষম হলেই খোলস পাল্টানোর কাজে হাত দেন তারা। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত আসন বসানোর কারনে, কোন মতে আসনে গুজে যাত্রীরা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের দীর্ঘ যাত্রার যন্ত্রনা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এক কথায় যাত্রীদের ভাগ্যের মতোই এ সড়কের গাড়ী গুলোর উন্নয়ন নেই বলা যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, অক্সিজেনে পাহাড়িকা বাস কাউন্টারে নেই বসার স্থান। মহিলা ও পুরুষ যাত্রীদের জন্য নেই কোন টয়লেট। অলিখিত এই নিয়ম মেনে চলছে যুগযুগ ধরে। রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কেউ বিষয়টি নিয়ে কোন কর্ণপাতই করছেনা। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী চট্টগ্রাম অক্সিজেন বাস ষ্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসা করছে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে মান্দাতা আমলের সকল বাস বাতিল করে উন্নত ও আধুনিক বাস চালুর দীর্ঘদিনের দাবি এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের।চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি আসা এম কামাল উদ্দিন নামের একজন ভ‚ক্তভোগী যাত্রী এ প্রতিনিধিকে আক্ষেপ করে বলেন, দেশ উন্নত হলেও রাঙামাটি বাসীর ভাগ্যের উন্নয়ন হবেনা। আমাদের চাহিদা সামান্য এবং ন্যায্য,আমরা এই সড়কে মান সম্মত যানবাহন ও যাত্রীসেবা চাই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটরযান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন,সরকার বাস টার্মিনাল না দিলে আমাদের কিছুই করার নেই। টার্মিনালের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেছি, এখনো সেটি প্রক্রিধীন আছে। তবে মান্দাতার আমলের লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ি এ রোড থেকে কবে সরাবে এবং যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ নিশ্চিত কখন করবেন সেই প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছেন তিনি। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় একটি নান্দনিক বাস টার্মিনাল রয়েছে কিন্তু সেটি ব্যবহার করছে না চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটরযান মালিক সমিতি । বর্তমানে এই সড়কে যত্রীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী যাত্রী সেবা এবং মান সম্মত কাউন্টার। এ বিষয়ে রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের যানবাহন নিয়ে আরটিএ’র মিটিং এ সবাই সোচ্চার হলেও কার্যকর পদক্ষেপে যুগের পর যুগ সময় কেন ব্যয় হচ্ছে বুঝি না। আমি মনে করি প্রতিকার প্রয়োজন এবং দ্রুত।