রাঙামাটি-কাপ্তাই বাইপাস সড়কের বেহালদশা

34

রাঙামাটি জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেকোন সময় সড়ক ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি টানা ভারী বর্ষণে রাঙামাটি জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাঙামাটি আসামবস্তি হয়ে কাপ্তাই সড়কের বেশ কিছু জায়গায় সড়ক আংশিক ধসে পড়েছে। সড়কের ধস ঠেকাতে রাঙামাটি-কাপ্তাই বাইপাস সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এবার হালকা যানবাহন চলাচলও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সড়ক ধস ঠেকাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিছু গাছ দিয়ে পাইলিংয়ের চেষ্টা করছে। সড়ক সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডির বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, রাঙামাটি শহরের আসামবস্তি এলাকা হতে কাপ্তাই সড়ক পর্যন্ত অনেক স্থানে সড়ক ধসে যানবাহন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের দুইপাশে থাকা ঝোপঝাড় যানবাহন চলাচলকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এসব ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয় বন্যহাতির দল। মাঝে মাঝে তারা সড়কেও চলে আসে। বর্ষার সময় রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কে বন্যপ্রাণির পদচারণা বেশি থাকে। তাই জরুরী ভিত্তিতে এসব ঝোপঝাড় পরিস্কার করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের যাত্রী ফজল করিম অভিযোগ করে বলেন, বর্ষা এলেই সড়ক সংস্কার করা হয়। যার ফলে এসব সড়কের কাজ ঠিকমত হয়না। এছাড়া প্রতি বছর বর্ষা এলেই গাছের খুঁটি গেড়ে রাস্তার ধস রোধ করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে সড়ক সংস্কারের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। ২০১৭ সালের পরে রাঙামাটিতে গাছের খুঁটি গেড়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মত অপচায় করা হয়েছে। এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং প্রভাবশালী সরকার দলীয় লোকজন এসব কাজে জড়িত বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুনে পাহাড় ধসে রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় মূল সড়কটি ধসে ১০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনার দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি রাঙামাটির বিধ্বস্ত সড়কগুলো। এবারও ভারী বর্ষায় জনমনে পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখে যায়, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানের ধসে যাওয়া সড়কের ভাঙন ঠেকাতে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং দেওয়া হয়েছে। বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এসব বস্তা আর খুঁটিকে সড়কের বিপরীত পাশ থেকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত বর্ষায় পানির প্রবাহে এসব সড়ক আবরো ধসে পড়েছে।
রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, বর্ষার আগেই সড়কগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা দরকার ছিল। এখন টানা ভারী বর্ষায় ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭ সালের ১৩ জুন সবচেয়ে বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ছিল পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। এতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরের বছর জেলার নানিয়ারচরে পাহাড় ধসে ফের ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
এদিকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আজও বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে আবার সড়ক ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সদরসহ জেলার ৭ উপজেলা এবং পাশের দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দবানের অন্তত ১০ লাখ মানুষ এসব সড়কের ওপর নির্ভরশীল। দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো গাছের খুঁটি আর মাটি ভরাট করে কেবল সাময়িক সংস্কার কাজেই ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। অথচ এসব টাকা খরচ করেও ঝুঁকি এড়ানো যায়নি।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, গত জুনের আগেই রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ১২৮টি স্থানে স্থায়ী মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজও তা ছাড় না পাওয়ায় এবারও বর্ষার আগে কাজ সম্পন্ন করার সম্ভাবনা নেই। সড়কগুলোর স্থায়ী মেরামত ও পুননির্মাণে ১৭০ কোটি টাকার ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে। ডিপিপি প্রস্তাবনায় জেলার বিভিন্ন সড়কের ১২৮ পয়েন্টে ৪ হাজার ৭২৫ মিটার পাইলসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ ও কিছু সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে। এসব প্রস্তাব ইতিমধ্যে পাশ হয়েছে। এছাড়াও এলজিইডির প্রায় ৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প পাশ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানান, ২০১৭ সালে ১৩ জুনের পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত হয় রাঙামাটির সড়কগুলো। গত দুই বছরেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি রাঙামাটির পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো। স্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়নি এসব সড়ক। বর্ষার শুরুর আগেই পাহাড় ধসে ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর মেরামত ও সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।