রাঙামাটির পাঁচ শতাধিক গ্রামে পানির সংকট

52

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাঁচ শতাধিক গ্রামে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত জুম চাষ ও বন উজাড়, ছড়া ও ঝর্ণা শুকিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাঘাইছড়ির সাজেক বিলাইছড়ি, বরকলসহ দুর্গম এলাকায় পাঁচ শতাধিক গ্রামে অর্ধলক্ষাধিকেরও বেশি লোকের বসবাস। তারা যুগ যুগ ধরে ঝর্ণা, ছড়া ও ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবন-যাপন করে আসছেন। অব্যাহত বৃক্ষ নিধন ও বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে শুস্ক মৌসুমে ওই সব গ্রামগুলোতে পানির সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়েও তেমন পানি মিলছে না। খবর বাসস’র
গ্রামবাসী জানান, অন্যান্য বছর এপ্রিল মাসে পানি সংকট থাকে বেশি। কিন্তু এবছর ফেব্রæয়ারি মাস থেকে পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ-ছয় কিলোমিটারের বেশি দূরে গিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ঝর্ণা ও ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ছোট ছোট পাথরের কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করছি। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে কোনো রকমে পানি পাওয়া গেলেও তা খাওয়ার অনুপযোগী।
স¤প্রতি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বড় বড় টিলা পাহাড়ের ওপর গ্রামগুলোর অবস্থান। এক গ্রামে ৩০ থেকে ৫০ টি পরিবারের বসবাস।
গ্রামগুলোর আশেপাশে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জুম চাষ করা হয়েছে। বনদস্যুরা কেটে সাবাড় করেছে এই অঞ্চলের অসংখ্য গাছ। নষ্ট করেছে পানির উৎসসমূহ। ফলে ৯ নম্বর পাড়া, ৮ নম্বর পাড়া, শিয়ালদাই, হাচ্ছে পাড়া, অরুণপাড়া ও লংকরসহ চার থেকে পাঁচ শতাধিক গ্রামে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
সাজেকের শিয়ালদাই গ্রামের কার্বারী ভুজন ত্রিপুরা ও লক্ষী বালা চাকমা বলেন, গত বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো পানির অভাব ছিল না। এবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে পানি সংকট শুরু হয়। আট থেকে দশ বছর আগে গ্রামের আশেপাশের ছড়াগুলোতে সারা বছর পানি পাওয়া যেত। জুম চাষ ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় দিন দিন পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে ওই সব ছড়া ও ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে গেছে। যেসব পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে সেই পানিও ব্যবহারের অনুপযোগী। এ পানি ব্যবহার করে অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
রাঙামাটির জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ জানান, অর্ধলক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। পাহাড়ি এলাকা সমতল এলাকার চেয়ে এক থেকে দুই হাজার ফুট উপরে। সেখানে টিউবওয়েল কিংবা রিং ওয়েল বসানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।