রাগ দমনে গাড়ি ভেঙে চুরমার করেন যারা

49

মনের মধ্যে যখন রাগ বা হতাশা দানা বাঁধতে থাকে, তখন আপনার হয়তো অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু গাড়ি ভাঙ্গার কথা কি কখনো আপনার মাথায় এসেছে? মানুষকে তাদের মানসিক চাপ এবং রাগ মোকাবেলার জন্য এই অভিনব পথই কিন্তু বাতলে দিচ্ছে নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানি। তারা গাড়ি ভাঙ্গার জন্য তাদের কাস্টমারদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে হাতুড়ি কিংবা ব্যাট।
আমস্টারডামের কাছে একটি স্ক্র্যাপইয়ার্ডে দেখা গেল এক অভিনব দৃশ্য। বটলগ্রীন রঙ্গের একটি ফোক্সওয়াগন গাড়ির উইন্ডস্ক্রীনে বেশ জোরে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলেন একজন। ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে গেল চারিদিকে। এই কাজটা যিনি করলেন, তিনি ভাবতেই পারেননি এরকম একটা কাজ তিনি করতে পারবেন।
‘আমি গাড়ি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। কিন্তু এরকম একটা কাজ কখনো করবো বলে ভাবিনি। একটা গাড়ি ভাঙ্গতে কেমন লাগে, সেটা দেখার ইচ্ছে ছিল। আজ সেই ইচ্ছে পূরণ হলো।’
গাড়ি ভেঙ্গে চুরমার করার ব্যাপারটিকে এখন রাগ দমনের সবচেয়ে ভালো উপায় বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। রাগ দমনের জন্য এর আগেও অনেক বিধ্বংসী থেরাপি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। কিন্তু গাড়ি ভেঙ্গে চুরমার করার ব্যাপারটি যেন একে নিয়ে গেল একেবারে অন্যমাত্রায়।
এই অভিনব চিন্তা প্রথম যার মাথায় আসে, তিনি মেরোলাইন বসহাউজেন। ‘আমি বিশ্বাস করি গাড়ি ভাঙ্গার মাধ্যমে আপনি রাগ মোচন করতে পারেন। রাস্তায় বা অন্য জায়গায় এই কাজ করা বেআইনি। কাজেই তার পরিবর্তে আপনি আমাদের এই স্ক্যাপইয়ার্ডে এসে এই কাজটা আইনি পথেই করতে পারেন। প্রচুর লোক কিন্তু এজন্যে এখানে আসে। অনেকে স্রেফ মজা করতে। কিন্তু আবার অনেকেই আসে, কারণ তারা জীবনে হয়তো খুব খারাপ কোন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে।’
যে দলটি সেখানে গাড়ী ভাঙ্গতে এসেছে, তাদেরকে নিজেদের হতাশা-রাগ তাদেরকে মনের মধ্যে পুষে রাখতে বলা হয়েছে। তারপর সেই রাগ-হতাশা গাড়ি ভেঙ্গে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
হাতুড়ি দিয়ে গাড়ি ভাঙ্গার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক মহিলা। কী ধরণের রাগ-ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছেন তিনি? বললেন, ‘ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়লে যে ধরণের রাগ হয়, সেটা। মনে হয় গাড়ি থেকে নেমে সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেই।’
আরেকজন তো কাজটা করতে পেরে রীতিমত উল্লসিত। ‘এই কাজটা করতে কিন্তু বেশ ভালো লাগে। খুবই ভালো লাগে। আমি গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে, গাড়ির ছাদে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছিলাম। এটা এমন একটা অভিজ্ঞতা, যা একেবারেই অসাধারণ।’
তবে রাগ মোকাবেলার এটাই সর্বোত্তম পথ কীনা, তা নিয়ে অবশ্য দ্বিমত করছেন অনেকে। এভাবে রাগ দমনের এই থেরাপিকে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিভাবে দেখেন?
জোয়ানা পানটাজি একজন মনোচিকিৎসক। তিনি বলছেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, এটা আমাকে বেশ ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। এখন আপনি গাড়ি ভাঙ্গছেন। এরপর হয়তো আপনি অন্য কিছু ভাঙ্গবেন।’
কেন তার এটা মনে হচ্ছে? ‘এরপর তারা হয়তো এভাবেই তাদের রাগের প্রকাশ ঘটাতে পারে। তখন হয়তো নিজেকে শান্ত করা, নিজের আবেগকে সংযত করার পরিবর্তে এরকম আচরণ করাই ঠিক বলে মনে করতে পারেন। কেউ কেউ হয়তো যুক্তি দিতে পারেন, নিজের বাড়ি গিয়ে বউ পেটানো কিংবা ফুটবল মাঠে গিয়ে সব ভেঙ্গেচুরে ফেলার চেয়ে এভাবে গাড়ি ভাঙ্গাতো ভালো। আমি এর সঙ্গে মোটেই একমত নই। কারণ এরকম কাজের মাধ্যমে আপনি রাগান্বিত অবস্থায় একই ধরণের আচরণকেই আসলে উৎসাহিত করছেন।’
জোয়ানা পানটাজির পরামর্শ হচ্ছে, কেউ যদি রাগ সামলাতে না পারেন, সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই সবচেয়ে ভালো।