রাউজানে ঘাতক বাস কেড়ে নিল কলেজছাত্রীর প্রাণ

66

রাউজানের কলেজছাত্রী রেশমার খাওয়া হলো না কিনে নেওয়া চিপস। কে জানতো চিপস কেনার ২ মিনিটের মধ্যে তার তরতাজা প্রাণটি কেড়ে নেবে ঘাতক বাস। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে রাউজান উপজেলা পরিষদের পূর্ব পাশের মূল ফটকের সামনে। নিহত রেশমা হাটহাজারী সরকারি কলেজের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও রাউজানের ডাবুয়া উত্তর হিংগলা নতুন পাড়ার মনির উদ্দিনের বড় মেয়ে। রেশমা রাউজান উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন সেলাই ও বিউটি পার্লারের প্রশিক্ষণার্থী ছিল।
জানা যায়, রেশমা তার বান্ধবী লাকী আকতারসহ কোচিং শেষ করে বিউটি পার্লারে যাচ্ছিলেন। এসময় উপজেলা গেটে আজমির পরিবহনের একটি বাসটি তাকে ধাক্কা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক শফিউল আলমসহ স্থানীয়রা রেশমাকে এসময় উদ্ধার করে স্থানীয় জেকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা বাসের চালক জসিমকে ধরে পুলিশে সোপর্দ এবং উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ করেন।
বিউটি পার্লার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক সুপ্রিয়া নাথ জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রেশমা প্রশিক্ষণে ভর্তি হন। মেয়েটি খুব ভালো ও ভদ্র ছিল।
রেশমার বান্ধবী সায়রা বেগম জানান, রেশমা ও লাকী হেঁটে হেঁটে প্রশিক্ষণ ক্লাসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। আমি তখন উপজেলা গেটের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রেশমা ১০ টাকা দামের একটি চিপস নিয়েছিল। কিন্ত ঘাতক বাস রেশমাকে চিপস খেতে দেয়নি, আমার সামনেই বাসের সাইড বক্সের ঢাকনার ধাক্কায় রেশমার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিল। বাসের চালক ও হেলপার রেশমাকে মেরে ফেলল।
জানা গেছে, রেশমার বাবা পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। তারা ৩ ভাই ২ বোন। রেশমা ছিল সবার বড়। সে হাটহাজারী সরকারি কলেজ থেকে এবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরমও সংগ্রহ করেছিল। একসময় স›দ্বীপের অধিবাসী থাকলেও বর্তমানে রাউজানে বসবাস করছে তার পরিবার। রেশমা ২০১৬ সালে রাউজান আরআরএসি সরকারি হাই স্কুল থেকে ৩ এসএসসি পাস করে। হলদিয়ার বাসিন্দা সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন জানান, ঘাতক বাসটি সোমবার সকালে আমাদের হলদিয়া ইউনিয়নের এয়াছিননগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাঙামাটিতে শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটায়। আজমির পরিবহনের বাসটির মালিক রাউজান সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইকতেয়ার উদ্দিন। গাড়ির চালক জসিমের বাড়ি রাঙামাটি বলে জানান তিনি।
চালককে আটকের সময় হেলপার পালিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেসানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল। এসময় তিনি নিজে ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেশমার পরিবারকে আইনী সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন।
রাউজান থানার উপ-পরিদর্শক সাইমুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আজ মঙ্গলবার সকালে লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে।