রাউজানে অস্ত্র কারখানার সন্ধান, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

82

রাউজানে অস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযানকালে সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। এ সময় রাউজান থানার ওসিসহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। পুলিশ বিপুল অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ ১৭ মামলার আসামি আলমগীর প্রকাশ আলম ডাকাত (৪১) ও তার ভাই নিজামকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে। ডাকাত আলম পূর্ব রাউজান সিদ্দিক চৌধুরী বাড়ির আব্দুল সাত্তারের ছেলে। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, অভিযানকালে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন রাউজান থানার ওসি মো. কেপায়েত উল্লাহ। তার হাত ও পায়ে মারাত্মক জখম হয়। এছাড়া গুলিতে আহত হন থানার এসআই সাইমুল ইসলাম, মো. কামাল ও হামিদ হোসাইন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। পরে ওসি কেপায়েত উল্লাহকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি ফিরে আসেন।
পুলিশ জানিয়েছে, উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য আলমগীর প্রকাশ ডাকাত আলম একটি মামলায় ১০ বছরের সাজাভোগ করে ২ মাস আগে জেল থেকে মুক্তি পান। এরপর তিনি এলাকার বেশকিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে নিয়ে তার অস্ত্রকারখানাটি পুনরায় চালু করে অস্ত্র বেচাকেনা শুরু করেন।
এ সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার রাতে রাউজান থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহ’র নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাউজান সদর ইউনিয়নের রাবার বাগানের ঘোড়া সামছুর টিলায় অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশ-সন্ত্রাসী মুখোমুখি হয়। সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করলে পুলিশও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে।
এ সময় সন্ত্রাসীদের চুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ওসি কেপায়েত উল্লাহ, গুলিতে আহত হন এসআই সাইমুল ইসলাম, মো. কামাল ও হামিদ হোসাইন।
পরে সন্ত্রাসীরা পালানোর সময় আলম ডাকাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদ করতে আলম ডাকাতের ভাই নিজামকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে ডাকাত আলমের তথ্য মতে, পূর্ব রাউজানের টিলার উপর অস্ত্রকারখানা থেকে ১০টি বন্দুক, গ্যাস গান সদৃশ্য ১টি অস্ত্র, ৬টি পাইপ গান, ১টি পুরাতন ম্যাগজিন, ৭টি কার্তুজ, ৭টি কার্তুজের খোসা, ৩টি এক নালা বন্দুকের অংশ, ২৭টি অস্ত্রের কাঠের বাট, ১টি ছোট লেদ মেশিন, ১টি তৈলের পাম্প বক্স, ২টি লোহা কাটার, ১টি চিমটি, ১টি পাইপ কাটার মেশিন, ১টি দা, ১টি প্লাস্টিকের তেলের বোতল, ২টি হ্যান্ড ড্রিল মেশিন, ৩টি ড্রিল মেশিন, অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কয়লা, ১টি কয়লার আগুন ধরানোর মেশিনসহ অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে রাউজান পৌরসভার প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, ডাকাত আলম একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে তিনি র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জানে আলম বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন।
রাউজান সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম জসিম উদ্দিন হিরু বলেন, রাউজানে কোন সন্ত্রাসীর জায়গা নেই। ডাকাত আলমের অস্ত্রকারখানায় পুলিশের সফল অভিযানকে স্বাগত জানাই।
আহত পুলিশের এসআই সাইমুল ইসলাম বলেন, আমরা ওসি স্যারের নেতৃত্বে অভিযান চালাই। সন্ত্রাসীদের গুলিতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ আমি আহত হই।
পূর্ব গুজরা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মহসিন রেজা বলেন, ওসি স্যারের নেতৃত্বে অস্ত্রকারখানায় অভিযানকালে ডাকাত আলমকে গ্রেপ্তার করি। একই সাথে তার ভাই নিজামকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসি।
ওসি মো. কেপায়েত উল্লাহ বলেন, রাত আড়াইটায় অভিযানে নামি। এ সময় সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়া ১৭ মামলার আসামি ডাকাত আলম পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করতে গেলে আমাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে আটক করতে সক্ষম হই। এছাড়া অন্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আমাকে প্রথম উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ও পরে নগরীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ডাকাত আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে। আলম একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তার বিরুদ্ধে রাউজান, নগরীর পাঁচলাইশ ও চাঁন্দগাও থানায় খুন, ডাকাতি ও অস্ত্রসহ ১৭টি মামলা রয়েছে।
এদিকে রাউজান থানায় আহত ওসিকে দেখতে আসা রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, ওসি সাহেবের সাহসী ভ‚মিকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি, দোষীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।