রাংগুনিয়ার শিক্ষাবিস্তারে মাওলানা সাইফুল হকের প্রচেষ্টা

103

আলহাজ্ব মাওলানা সাইফুল হক। রাংগুনিয়া উপজেলার শিক্ষার প্রসারে বলা যায় মরহুম মাওলানা সাইফুল হক বাতিঘররূপী একটি সুপরিচিত নাম। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায়। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মরিয়ম নগর ইউনিয়নের ফুলগাজি পাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত একটি মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা মাওলানা আবদুল গফুর ছিলেন একজন স্বনামধন্য আলেম ও সমাজসেবক। মাওলানা সাইফুল হক শিক্ষাজীবনে আলীম পর্যন্ত রাংগুনিয়ার অন্যতম আলেম ও বুযর্গ মাওলানা নুরুচ্ছাফা নঈমী (রাহ.) এর স্নেহের পরশে থেকে নুরুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসায় সম্পন্ন করেন। এরপর চট্টগ্রামের বিখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসায় কামিল স্তর শেষ করেন। মাওলানা সাইফুল হক নিজেও একজন শিক্ষক ছিলেন। রাংগুনিয়ার শিলক হাইস্কুলে হেড মাওলানা হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন এবং অবসর গ্রহণ করেন।
আমি রাংগুনিয়ার শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনার চেষ্টা করব। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে মাওলানা সাইফুল হক সাহেব ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে অনেককে প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকতায় আগ্রহী করে তোলেন। এক্ষেত্রে বাদ যাননি মুসলিমরা তো বটেই হিন্দু ও অন্যান্য স¤প্রদায়ের শিক্ষিত লোকজনও। উপজেলার এমন কোন ইউনিয়ন নেই যেখানে তিনি সে সময় শিক্ষকতা পেশা বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে মানুষকে উৎসাহ দেননি। অনেকে যা এখনো ভুলতে পারেন না। স্মরণ করেন এখনও। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক কর্মকর্তার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ফলে তাঁর কাছে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এর শিক্ষকদের নানা সমস্যা দ্রæত সমাধানে সহযোগিতা করতেন।
শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয় মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারেও তাঁর অবদান রয়েছে। রাংগুনিয়ার বহু স্কুল,মাদ্রাসা,কলেজ ও মসজিদ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কর্মকর্তার সাথে সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে রাংগুনিয়ার বিভিন্ন হাইস্কুল-কলেজের সমস্যা দ্রæত সমাধান করতে সহযোগিতা করতেন। শিলক হাইস্কুলে এসএসসির পরীক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর একক অবদান রয়েছে। সেসসময় রাংগুনিয়ার আরেক কিংবদন্তি, দানবীর এম,শাহ্ আলম চৌধুরী (প্রবীণ ও গুণী এ লোকটি এখনও আলহামদুলিল্লাহ্ বেঁচে আছেন) সাথেও ওনার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। যে কারণে শাহ আলম চৌধুরীর যে কোন কাজে মাওলানা সাইফুল হকও যুক্ত থাকতেন। গরিব ও মেধাবি অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে তিনি (সাইফুল হক) নিজের অর্থ ও সম্ভব সব ধরণের সাহায্য করতেন।
মরহুম মাওলানা সাইফুল হক সাহেবেরা চার ভাই দুই বোন। ওনার এক ভাই মরহুম হাসান মাস্টার যিনি নিজেও একজন শিক্ষক ছিলেন। মরিয়ম নগর ইউনিয়নে শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক অবদান রাখেন তিনি । মূলতঃ তাঁর (হাসান মাস্টার) প্রচেষ্টায় রাংগুনিয়া উপজেলার সুপরিচিত মরিয়ম নগর হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠা পায়। তাঁর অন্য ভাইরাও শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন। ভাইদের মধ্যে হাসান মাস্টার ছাড়াও মরহুম বদরে মিল্লাত, মরহুম হাফেজ জাকারিয়া,মরহুম আয়ুব আলীও শিক্ষক ছিলেন-জানান সাইফুল হক সাহেবের বড় ছেলে আবদুল আউয়াল যিনি নিজেও একজন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে স¤প্রতি অবসর নেন। আমার দাদা মরহুম কাজী আবদুল হক মাস্টার ও মাওলানা সাইফুল হক সাহেব একে অপরের সাথে খুব ঘনিষ্ট ছিলেন। আমি ওনাকেও দাদা বলে সম্বোধন করতাম। আমাদের সাথে ওনার সম্পর্ক ছিল পরিবারের মতো। আমার নানা সরফভাটা নিবাসী মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা আমিনুর রহমান মাস্টারের সাথেও ওনার সম্পর্ক ছিল।মাওলানা সাইফুল হক সাহেব মরিয়ম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এম শাহআলম চৌধুরী হাই স্কুল,হামিদ শরীফ বালিকা স্কুল, আলমশাহ পাড়া কামিল মাদ্রাসা সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া রাংগুনিয়ার বিভিন্ন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি এসোসিয়শনের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমরা নিজেরাও তাঁর নানা অবদানের কথা জেনেছি,শুনেছি। স্নেহ করতেন আমাকে খুব। লম্বা, চওড়া সফেদ দাড়ি ওয়ালা এ গুণী মানুষটিকে আজো অনেকে স্মরণ করেন। আলোচনা করেন শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান সম্পর্কে।তিনি ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর প্রায় ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আমি মরহুম মাওলানা সাইফুল হক সাহেবের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ্ যেন তাঁকে বেহেস্ত নসিব করেন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক