রমজান: যা করবো যা করবো না

223

মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অসীম দয়া ও করুণায় বছর ঘুরে মুসলিম বিশ্বের কাছে হাজির হয়েছে আরেকটি রমজান মাস।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নিয়ামত। আর নিয়ামতের শোকর আদায় হিসেবে পরিপূর্ণভাবে রমজানের হক আদায় করা প্রত্যেকটি মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন সূরা ইব্রাহিমে বলছেন, ‘যদি তোমরা আমার নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করো তাহলে আমি তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’
সুতরাং পবিত্র রমজান মাসের মতো এক নিয়ামত পাওয়ার পর অবশ্যই আমাদের বেশি বেশি শোকর আদায় করা উচিৎ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে সেই শোকর আদায় করবো? দুনিয়ার রীতি নীতি অনুযায়ী, মানুষ যদি কারও প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে তাহলে সে সবসময় ওই ব্যক্তির প্রশংসা করে, তার উপকারের বদলা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং কোনো কাজকর্মে সে তাকে ডাকলে আপ্রাণ চেষ্টা করে সেটি সম্পন্ন করার।
আল্লাহ তো উপকারের বদলা নেওয়ার মুখাপেক্ষী নন বরং তিনি বান্দাকে দিতে পছন্দ করেন। তাই আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের শোকর আদায়ের অর্থ হচ্ছে, তার হুকুম-আহকামগুলো যথাযথভাবে আদায় করা, তিনি যা নিষেধ করেছেন তার থেকে বিরত থাকা, তার রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে জীবন-যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে চলা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ রমজান মাসের রোজাগুলোকে ফরজ করেছেন এবং রাতগুলোতে নামাজ (অর্থাৎ তারাবিহ) পড়াকে সওয়াবের কাজ বানিয়েছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এই মাসে কোনো নফল এবাদত করলো সে যেন রমজানের বাইরে একটি ফরজ আদায় করলো, আর যে ব্যক্তি এই মাসে কোনো ফরজ আদায় করলো সে যেন রমজানের বাইরে ৭০টি ফরজ আদায় করল।’
রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তারাবিহ। রোজার স্বাদকে মুমিনের অন্তরে বাড়িয়ে দেয় এই তারাবিহ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহর নামাজ আদায় করে, তার অতীতের সব গুনাহ্আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেবেন- (বুখারি)।’
চলতি বছর দুর্ভাগ্যজনকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা মুসলিম বিশ্বে মসজিদে তারাবিহর জামাতের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাই বলে তারাবিহ ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা পবিত্র কুরআনের হাফেজ নন, অর্থাৎ সাধারণ মসুল্লি তারা বাড়িতেই সুরা তারাবিহ আদায় করবেন।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজান মাস মানুষের সাথে সহানুভূতির মাস। তাই প্রত্যেকেরই উচিৎ তাদের অধীনস্থদের কাজের বোঝা এ মাসে হালকা করে দেওয়া। এর ফজিলত বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই মাসে আপন গোলামের (কর্মচারী বা খাদেম) কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।’
আমাদের সমাজের চিত্রটি ঠিক এর উল্টো। দেখা গেছে, পরিচ্ছন্নতার নামে এই মাসে গৃহকর্মীদের ওপর কাজের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়, ইফতারি আয়োজনের নামে হাড়ি-পাতিল ধোয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়, রান্নার আয়োজনের পরিমাণও বেড়ে যায়। ওই গৃহকর্মী বেচারির ওপর অন্যমাসের তুলনায় রমজানে কাজের বোঝা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কেউ যদি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালোবাসে তাহলে তার উচিৎ হাদিসের ফজিলতের দিকে লক্ষ্য রেখে এর ওপর আমল করা।
রমজানে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি কাজ বেশি করতে বলেছেন। এর মধ্যে দুটি হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আর দুটি এমন কাজ যা বান্দার না করে উপায় নেই। প্রথম দুটি কাজ হচ্ছে- বেশি বেশি লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ও এস্তেগফার পড়া। এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এস্তেগফার পড়া মানে শুধু মুখে মুখে আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া নয়। বরং এই শব্দটি উচ্চারণের সময় আন্তরিকভাবে যেন সব গুনাহ ও অন্যায়ের জন্য তওবা করা হয়। যে দুটি কাজ বান্দার না করে উপায় নেই সেগুলো হচ্ছে- আল্লাহর কাছে জান্নাত পাওয়ার প্রার্থনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া।