রমজান বরকতপূর্ণ আল্লাহর মেহমান

82

মাহে রমজানের গত দুই দশকের দুটি পর্ব রহমত ও মাগফিরাত আমাদের মধ্য হতে বিদায় নিয়েছে। শেষ দশক নাজাত আজ শুরু। নাজাত অর্থ মুক্তি। গুনাহগার বান্দাদের রোজা আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ মাফ তথা নাজাত লাভের সুসংবাদ পর্ব।
প্রখ্যাত হাদীসবিশারদ হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র.) বলেন, রমজান মাসের তিন দশক, প্রথম দশকে মহান রব মুমিনদের উপর বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। ফলে তাদের মধ্যে রোজা তারাবিহ্ আদায়ের সাহস হয় এবং ভবিষ্যতে পাবে এমন নিয়ামতগুলো অর্জনের যোগ্যতা লাভ হয়। দ্বিতীয় দশকে সমস্ত সগীরা গুণাহ ক্ষমা হয়, যা জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের উপায় বা মাধ্যম। তৃতীয় দশক রোজাদারের জান্নাতি হয়ে যাওয়ার ঘোষণা এবং তাতে প্রবেশ করার ভিসা ও পাসপোর্ট লিপিবদ্ধ করা হয়। মাহে রমজান এমন এক বরকতময় মাস যার আগমনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাল্লাম সাহাবীদের মুবারকবাদ জানাতেন। তিনি তাঁদেরকে এ মর্মে সুসংবাদ প্রদান করতেন তোমাদের সামনে পবিত্র রমজান মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রোজা ফরজ করেছেন। এই পবিত্র মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়, বন্দ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজা এবং বন্দি করে রাখা হয় শয়তানকে। এর মধ্যে একটি মহান রাত এমনি যে, তা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। যে দুর্ভাগা ব্যক্তি এ মাসের মঙ্গল ও কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকল সে যেন সর্ব প্রকার মঙ্গল ও কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকল। (মুসলিম )
মাহে রমজানে করণীয় : এই মাহে রমজানে চারটি কাজ অবশ্য করণীয়। দুটি কাজতো এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের পরওয়ারদেগার সন্তুষ্ট হন, আর অবশিষ্ট দুটি এমন যা ছাড়া তোমাদের কোন গত্যন্তর নেই। এই চারটির মধ্যে একটি কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা। আর দ্বিতীয়টি হলো ইসতেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা, এই দুটি কাজ আল্লাহপাকের দরবারে অতি পছন্দনীয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ হলো জান্নাতের আশা করা ও দোজখ থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এ দুটি এমন বিষয় যা তোমাদের জন্যে একান্ত জরুরি। রোজাদারকে কিয়ামতের দিন আমার হাউজ থেকে পানি পান করানো হবে, এরপর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে আর কখনো পিপাসা অনুভব করবে না। (ইবনে খোজাইমা (র.) বর্ণিত।)
অপর একটি হাদিসে রয়েছে- ‘প্রতিদিন ইফতারের সময় এমন দশ লাখ লোককে দোজখ থেকে মুক্ত করেন, যারা জাহান্নামের জন্য উপযোগী হয়েছিল এবং যখন রমজানের শেষদিন আসে তখন প্রথম রমজান হতে আজ পর্যন্ত যতজন লোক দোজখ থেকে মুক্ত করা হয়েছে, সে পরিমাণ লোককে ওই দিনে দোজখ থেকে মুক্তি দেবেন। অতএব প্রত্যেক রোজাদার মুমিনগণের উচিৎ আল্লাহপাকের ঘোষিত ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে নিজকে কঠিন ও ভয়ানক দোজখ হতে বাঁচানোর জন্য সচেষ্ট হওয়া। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন, আমিন।