রমজানে পণ্যের দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা

28

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে যায়নি। আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে কোন অসাধু চক্র নিত্যপণ্য মজুদ করে মূল্য বৃদ্ধি করলে তা মানা হবেনা।
তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ করেই ২শত টাকা, বেগুনের দামে আগুন হবে, তা হতে দেবো না। বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে। সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করলে চিহ্নিত ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। সরকার এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা, জেলা প্রশাসকগণের সাথে সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনের কিছু কিছু গ্রামে আবারো নতুন করে অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। সেখানকার নির্যাতিত রোহিঙ্গা ও রাখাইনের অধিবাসীরা এখানে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা কক্সাবাজার, বান্দরবান ও অন্যান্য এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক বা রোহিঙ্গা যাতে নতুন করে এদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে আসা মাদক, অস্ত্রের চোরাচালান ও তেল পাচার রোধে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে টহল অব্যাহত রাখাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর নজরদারী করতে হবে। সরকারের দেয়া নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখাসহ দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এসব অপরাধ রোধে প্রশাসন জিরো টলারেন্স থাকবে। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কর্তৃক বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার তথ্য বিবরণী, নিষ্পত্তি ও অগ্রগতির প্রতিবেদন নিয়মিত দাখিল করতে হবে।
আবদুল মান্নান বলেন, খুন, ছিনতাই, দস্যুতা, ইভটিজিং, রাহাজানি, অপহরণ ও অন্যান্য অপরাধ কর্মকাÐ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদেরকে আত্মসমর্পনের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চোরাচালান নিরোধ কমিটির অনুষ্ঠিত সভা ফলপ্রসূ হওয়ার ব্যাপারে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকার ভুর্তুকি দিয়ে বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। পেট্রোল পাম্প থেকে ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেল যাতে পাচার না হয় সে বিষয়ে সীমান্তবর্তী জেলা প্রশাসকগণকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ফিলিং স্টেশনের মালিকদের সাথে এ ব্যাপারে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, মাদক রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে থাকবে জিরো টলারেন্স। অস্ত্র উদ্ধার, চোরাচালানরোধ, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে। জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদক উদ্ধার, অপরাধী গ্রেপ্তার, দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট নিরসনে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমান, বিভাগীয় পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দীপক চক্রবর্তী, বিজিবি’র চট্টগ্রাম রিজিয়নের ডেপুটি কমান্ডার কর্ণেল মো. আরেফিন, ডিজিএফআই’র চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তা বিগ্রে. জেনারেল মোহাম্মদ এমদাদ, বিজিবি বান্দরবানের সেক্টর কমান্ডার মো. জহিরুল হক, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন (চট্টগ্রাম), তন্ময় দাস (নোয়াখালী), মো. মাজেদুর রহমান খান (চাঁদপুর), আবুল ফজল মীর (কুমিল্লা), মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম (বান্দরবান), অঞ্জন চন্দ্র পাল (ল²ীপুর), একেএম মামুনুর রশিদ (রাঙামাটি), মো. কামাল হোসেন (কক্সবাজার), মো. শহিদুল ইসলাম (খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা), মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ফেনী), হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন, কাস্টমস্ কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান পাটওয়ারী, কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার মোহাম্মদ হাসান, কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর মোহাম্মদ মারুফুর রহমান, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদার, র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল মাহমুদ, এনএসআই’র উপ-পরিচালক মো. আবদুল মুকিত, আনসার-ভিডিপি’র চট্টগ্রাম রেঞ্জ পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান প্রমুখ।
এসময় বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিষেক দাশ। পৃথক সভাগুলোতে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি