রমজানজুড়ে থাকবে তীব্র গরম

75

এবার উষ্ণতাকে সঙ্গী করেই যাত্রা শুরু করেছে বাংলা নববর্ষ। বিদায়ী বছরে চৈত্রের শেষে কালবৈশাখীর বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টির দাপট থাকলেও গ্রীষ্মের গোড়া থেকেই প্রায় প্রতিদিন চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের শেষে দিনের তাপমাত্রা বেড়েছে দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। সপ্তাহান্তে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছুঁয়েছে ঢাকা অঞ্চলের ফরিদপুরে। আবহাওয়ায় বিরাজমান মৃদু তাপদাহের এ অবস্থা আরও কয়েক দিন তা অব্যাহত থাকবে। সংখ্যাগত দিক থেকে তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় থাকলেও বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি বেশি থাকায় উষ্ণতার অস্বস্তি রয়েছে জনজীবনে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, পারদ চড়ার প্রবণতা আপাতদৃষ্টিতে অব্যাহত থাকলেও চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ফের কালবৈশাখীর দাপট ও সাগরে নিম্নচাপের শঙ্কা রয়েছে। আগামী মে মাসে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। এবার রমজানে রোজাদারদের অস্বস্তির অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে তাপদাহ। পুর্বাভাসেই এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। পুরো মে মাসজুড়েই দেশের অধিকাংশ এলাকায় দাপট থাকবে তাপদাহের। মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যান্য স্থানে এক থেকে দুটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টির আলামত রয়েছে, যার একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এছাড়া, চলতি মাসের শেষদিকে দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপদাহ বয়ে যাওয়ার আভাস আগেই দিয়ে রেখেছেন আবহাওয়াবিদরা। ওই সময় দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরও অতিক্রম করতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেছেন। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা অনুমোদিত গ্লোবাল প্রডিউসিং সেন্টার (জিপিসি), এ্যাপেক ক্লাইমেট সেন্টার (এপিসিসি) এর প্রাপ্ত মডেল পূর্বাভাস, আবহাওয়ার উপাত্ত, জলবায়ু মন্ডল, এল নিনো/লা নিনা’র অবস্থা ইত্যাদি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেই আবহাওয়া অধিদপ্তর দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
এদিকে, অতিরিক্ত গরমে মানুষের শরীরে নানা ধরণের জীবানুর সংক্রমণের পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দীর্ঘ সময় প্রচন্ড গরমে থাকার ফলে শরীরের তাপমাত্রা একশ’ পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় শরীরের ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং অনেক সময় মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ ধরণের ঝুঁকি এড়াতে তরল খাবারের পাশাপাশি একাধিকবার গোসলেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস মে। বাংলা বর্ষপঞ্জির ঋতু পরিক্রমায় গ্রীষ্মের হামাগুড়ির সময়। বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম পক্ষের বিদায়ে যাত্রা শুরু হয় মে মাসের। ২০১৭ সালের মে মাসে টানা ১৯ দিনের তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়েছিল সারাদেশ। ওইবছর ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব জেলায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই। রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে ছিল। কিন্তু, গত বছর মানে ২০১৮ সালের মে মাস ছিল উল্টো বৃষ্টিমুখর। ওই বছর মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে দেশে গড় বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অধিদপ্তরের গবেষণার তথ্য বলছে, ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ বছর গ্রীষ্ম ঋতুতে গড় বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম। কিন্তু জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির খেয়ালী আচরণের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সাল থেকে গ্রীষ্ম ঋতুতে আবহাওয়া পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওই বছর থেকে গ্রীষ্ম ঋতুতে অতিবৃষ্টি, দীর্ঘ সময় ধরে কালবৈশাখী, অত্যধিক বজ্রপাতের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার বৈশাখের শুরুতে চট্টগ্রামসহ অধিকাংশ এলাকার মানুষ উষ্ণতার দাপট অনুভব করলেও কোনও কোনও এলাকায় বৃষ্টির শীতলতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে বৈশাখের প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিন গত সোমবারও ময়মনসিংহের নেত্রকোণা, সিলেট ও রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। ওইদিন সর্বোচ্চ ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় সিলেটে। তবে, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের কোথাও বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত রাজশাহী ও রংপুরের দুয়েকটি এলাকা ছাড়া সারাদেশের আর কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। ওইদিন সর্বোচ্চ ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রংপুর অঞ্চলের তেঁতুলিয়ায়। আর গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। তবে, পুরো অঞ্চলের মধ্যে রাঙামাটিতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণনা করেন।