যেসব খাত থেকে আসবে অর্থ

37

‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বেশিরভাগ টাকাই আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। এনবিআর এই টাকা ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এই তথ্য জানান।
বাজেটের তথ্য অনুযায়ী, ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এরমধ্যে এনবিআর সংগ্রহ করবে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ২ শতাংশ।
এনবিআরের সংগ্রহ করা তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে আসবে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। যা এনবিআরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ দশমিক ৮। আর আয়কর থেকে আসবে ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর থেকে টাকা পাওয়া যাবে এক লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এছাড়া, আমদানি শুল্ক থেকে এনবিআর সংগ্রহ করবে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। যা এনবিআরের মোট টার্গেটের ১১ দশমিক ২ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক থেকে এনবিআর আদায় করবে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বা ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। আবগারি শুল্ক থেকে এনবিআর সংগ্রহ করবে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। রফতানি শুল্ক থেকে এনবিআর সংগ্রহ করবে ৫৪ কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে এনবিআর সংগ্রহ করবে এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্ভূত কর থেকেও আসবে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাদক শুল্ক কর থেকে আসবে ১০৯ কোটি টাকা। যানবাহন কর থেকে আসবে এক হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। ভূমি রাজস্ব থেকে আসবে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। স্ট্যাম্প (নন জুডিশিয়াল) বিক্রি করে পাওয়া যাবে ১১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। সারচার্জ/১ থেকে আসবে ৫১১ কোটি টাকা।
বাজেট বিবরণীর তথ্য মতে, শুধু করারোপ করে (এনবিআর ও এনবিআরবহির্ভূত) আসবে তিন লাখ ৪০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আসবে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এই ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকার মধ্যে লভ্যাংশ ও মুনাফা থেকে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। সুদ আয় থেকে আসবে ৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। প্রশাসনিক ফি থেকে আসবে ৮ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। জরিমানা, দÐ ও বাজেয়াপ্তকরণ থেকে আসবে ২৮৯ কোটি টাকা। সেবা খাত থেকে পাওয়া যাবে ৭ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। ভাড়া ও ইজারা থেকে আসবে ৬৩১ কোটি টাকা। টোল থেকে আসবে ৬৮৬ কোটি টাকা। অবাণিজ্যিক বিক্রয়খাত থেকে আসবে ২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। কর ছাড়া অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি থেকে আসবে ৫ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। মূলধন রাজস্ব থেকে আসবে ২৫২ কোটি টাকা।
বৈদেশিক ঋণ ও বৈদেশিক অনুদান থেকে আসবে ৭৯ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক অনুদান ধরা হয়েছে চার হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। এই অনুদানের মধ্যে খাদ্য সাহায্য ধরা হয়েছে ৩৪৩ কোটি টাকা। আর প্রকল্প সাহায্য আসবে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে ৭৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প ঋণ ৬৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বহির্ভূত প্রকল্প ঋণ ৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা এবং বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা ঋণ ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে আসবে ১৪ দশমিক ৮ ভাগ অর্থ। অর্থাৎ ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা আসবে অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে। এরমধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম এই বাজেটের আকারও আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেটের আকার বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট সংসদে পেশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে না পারা ও উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকারের চেয়ে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি। আর চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের আকারের চেয়ে ১৮ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।