যেভাবে আগাম তথ্য পেয়েছিল ভারত

55

২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বিস্ফোরণের আগে এ হামলার ব্যাপারে দফায় দফায় দেশটিকে সতর্ক করেছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। আর ভারতীয় গোয়েন্দাদের প্রাপ্ত তথ্যের অন্যতম উৎস ছিল সন্দেহভাজন এক হামলাকারীর সম্পর্কে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত। নিজেদের হাতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বার বার লঙ্কান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেয় দিল্লি। যদিও শেষ পর্যন্ত এসব গোয়েন্দা সতর্কতা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় শ্রীলঙ্কা। এমনটাই উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের অনুসন্ধানে।
শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারাও ভারতের কাছ থেকে একাধিকবার এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিরিজ বিস্ফোরণের মাত্র দুই ঘণ্টা আগেও দেশটিকে সতর্ক করেছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। এর আগে গত ৪ এপ্রিল এবং ২০ এপ্রিল রাতেও দুই দফায় লঙ্কান গোয়েন্দাদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দিল্লি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ভারতীয় একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মূলত ভারতের কারাগারে বন্দি সন্দেহভাজন এক হামলাকারীর কাছ থেকে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতে পারে দিল্লি। জিজ্ঞাসাবাদে কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে তথ্য দেয় সে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ওই সন্দেহভাজন কর্তৃপক্ষকে জানায়, শ্রীলঙ্কায় সে এক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। স্থানীয় চরমপন্থিদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে।
ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। জঙ্গিদের কথিত মুখপত্র ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’ থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে সংগঠনের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির প্রতি আট ব্যক্তিকে আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
আইএসের দাবি, শ্রীলঙ্কার চার্চ ও হোটেলের আত্মঘাতী হামলায় জড়িত ছিল তারা। হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জাহরান হাশিম নামে এক ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করা হয়।
আইএসের ভিডিওতে থাকা আট ব্যক্তি শ্রীলঙ্কায় ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত নামের একটি ছোট সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে। এ সংগঠনটি মূলত শ্রীলঙ্কায় আইএসের মতাদর্শকে ধারণ করে। হামলার তদন্তে শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষও এই সংগঠনটিকে বিবেচনায় নিয়েছে।
২১ এপ্রিলের সিরিজ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারতো। কেননা সেদিন আরও একটি হোটেলকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চেয়েছিল হামলাকারীরা। তবে শেষ পর্যন্ত ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এছাড়া কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছেও একটি অবিস্ফোরিত পাইপ উদ্ধার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দফায় দফায় গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরও সরকার হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। গত মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এ নিয়ে কথা বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি বলেন, যেসব নিরাপত্তা কর্মকর্তা হামলার ব্যাপারে আগেই গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল, তারা এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেনি। ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানো হবে।
এর আগে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রজিথা সেনারত্ন বলেন, দুই সপ্তাহ আগেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছিল। এতে হামলাকারীদের নামও উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ওই সতর্কতা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পর্যন্ত পৌঁছায়নি।
২৪ এপ্রিল লঙ্কান প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধন সাংবাদিকদের জানান, ২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ আত্মঘাতী হামলাকারী জড়িত ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে দেশটির তদন্তকারীরা। তাদের সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক। নয় আত্মঘাতীর মধ্যে আটজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী জানান, নয় আত্মঘাতীর মধ্যে এক নারীও ছিল। তিনি জানান, ভয়াবহ ওই সিরিজ হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রুয়ান বিজয়বর্ধন বলেন, হামলাকারীদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। তারা মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। হামলাকারী ও তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো। অন্তত একজন আত্মঘাতী হামলাকারী লন্ডনে পড়াশোনা করেছে। দেশে ফেরার আগে সে অস্ট্রেলিয়া থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে।